রাজশাহীর ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড

দুই ওয়ার্ডে চার প্রার্থীর লড়াইয়ের আভাস

রিমন রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৮, ০৯:৫১ | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০১৮, ০৯:৪৮

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। চাইছেন ভোট, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে ভোটাররা বলছেন, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দেখে নয়, যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন তারা। ফলে নগরীর সাত ও আট নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই দুজন করে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সাত নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা আট হাজার ৭০০ জন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন শেখ (লাটিম), সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল করিম (ঠেলাগাড়ি), সাবেক ছাত্রমৈত্রী নেতা মতিউর রহমান মতি (টিফিন ক্যারিয়ার), যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম (ট্রাক্টর) এবং রাজপাড়া থানা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান (ঘুড়ি)।

এ ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মতি। ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এলাকার মানুষের সাথে মতির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। মতির সঙ্গে বর্তমান কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন শেখের লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভোটাররা বলছেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবেক ছাত্রনেতা মতিই এগিয়ে থাকবেন।

মতি বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি সংস্কার না করায় হুমকির মুখে রয়েছে। এ ওয়ার্ডে রয়েছে জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন এবং রাস্তাঘাটের সমস্যা। আমি নির্বাচিত হলে এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে নাগরিক ভোগান্তি দূর করার চেষ্টা করব। এছাড়া ওয়ার্ডে খেলার মাঠ এবং কমিউিনিটি সেন্টার করার পরিকল্পনা আছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পায়ে চালানো ভ্যান ব্যবহার করেন। তাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করব। আশা করছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য ভোটাররা আমাকে সমর্থন করবেন।

এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন শেখ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ শেষ করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখনও কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি। জলাবদ্ধতাও রয়েছে। ওয়ার্ডটির সার্বিক উন্নয়নে আমার কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। এবার নির্বাচিত হলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

আরেক প্রার্থী রেজাউল করিম ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে এ ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও কাউন্সিলর পদে ভোট করছি। আশা করছি, ওয়ার্ডের ভোটাররা অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে আমাকে নির্বাচিত করবেন।

ভোটাররা জানিয়েছেন, আরেক প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বর্তমানে অস্ত্র এবং মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তর হয়ে কারাগারে বন্দি আছেন। তার নামে রয়েছে হত্যাসহ ছয়টি মামলা। তাই তার প্রতি তাদের আগ্রহ কম।

ওয়ার্ডের ভেড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক কাজী মফিজুর রহমান বলেন, কোনো সন্ত্রাসী কিংবা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি নয়; ক্লিন ইমেজের যোগ্য প্রার্থীকেই কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চান তিনি।

এদিকে নগরীর আট নম্বর ওয়ার্ডেও চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা সাত হাজার ৩০০ জন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর এসএম মাহবুবুল হক (লাটিম), সাবেক কাউন্সিলর আবদুল হামিদ (ট্রাক্টর), রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীদ হাসান বারিক (ঠেলাগাড়ি), নির্বাহী কমিটির সদস্য জানে আলম খান (ঘুড়ি) এবং সাবেক যুবদল নেতা আবদুল মোত্তালিব মিঠু (মিষ্টি কুমড়া)।

২০১৩ সালে এ ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন এসএম মাহবুবুল হক। কিন্তু তিনি এলাকার উন্নয়নে সেভাবে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জলাবদ্ধতা, বেহাল রাস্তাঘাট এবং ময়লা আবর্জনার কারণে অপরিচ্ছন্নতাসহ ওয়ার্ডে নানা সমস্যা রয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাজিহাটা ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় পানি জমে যায়। দুই থেকে তিনদিন হাঁটু পানিতে রাস্তা ডুবে থাকে। কাদায় চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গত তিনবছর থেকে কাউন্সিলরকে বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি মহল্লার লোকজনের ভোগান্তির বিষয়টি আমলে নেননি। এ কারণে এবার আমরা পরিবর্তন চাই।

অভিযোগের ব্যাপারে কাউন্সিলর মাহবুবুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কারও কোনো ক্ষতিও করিনি। সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এলাকায় আরও কিছু উন্নয়ন করতে চাই। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। তাই ভোটাররা আমাকেই বেছে নেবেন বলে আশা করি।

এ ওয়ার্ডে ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই দফায় কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন আরেক প্রার্থী আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডটিতে রেডিও সেন্টার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখা কার্যালয়, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি এবং বেসরকারি অফিস আছে। কিন্তু এলাকাগুলো অপরিচ্ছন্ন। ২০১৩ সালে মাত্র ৪১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। এবার নির্বাচিত হলে আমি পরিচ্ছনতার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেব।

এ ওয়ার্ডে এবার প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহীদ হাসান বারিক। তরুণ এ প্রার্থী বলেন, নাগরিক ভোগান্তি দূর করার জন্যই প্রার্থী হয়েছি। একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা জানে আলম জনি। তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্যই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। সাবেক যুবদল নেতা মোত্তালিব হোসেন মিঠু বলেন, দীর্ঘ সময় থেকে মানুষের মাঝেই আছি। এ কারণে ভোটাররা আমাকে বিমুখ করবেন না বলে আমি মনে করি।

তবে ওয়ার্ডের ভোটাররা বলছেন, পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আবদুল হামিদ এবং শাহীদ হাসান বারেকের মধ্যেই লড়াইয়ের সম্ভাবনা বেশি। ওয়ার্ডের কাজিহাটা এলাকার বাসিন্দা মাফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় হামিদ এবং বারেকের ক্লিন ইমেজ রয়েছে। অতীতে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনকালে হামিদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। আর বারিক কর্মোদ্যোগী এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তি বলে সুনাম রয়েছে। তাই লড়াইটা তাদের মধ্যেই হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :