নিলামের নামে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকিতে সেতু

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৫০ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮, ১২:১৬

মো. সানাউল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ

মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সীমনা ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সীমনা ছড়ার আশপাশের ফসলি জমি। দেবে গেছে সেতুর মাঝের অংশ। ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

কৃষি জমির বালু উত্তোলনের বিষয়ে ৬নং শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌফিকুল আলম চৌধুরী গত ৩০মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বরাবর একটি স্বারকলিপিও দিয়েছেন।

এতে বলা হয়, প্রবল বৃষ্টির কারণে ৬নং শাহজাহানপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গা প্লাবিত হয়। বিশেষ করে সিমনা নদীর অধিকাংশ জায়গায় পানির স্রোতে নদীর উভয় পাড়ে বিশাল ভাঙনে প্লাবিত হয়। এতে ফসলি জমির ওপর পলি এবং বালির স্তপ পড়ে ওই এলাকার জমি কৃষি কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

কৃষিকাজ চালু রাখতে জমির বালি স্তুপ অপসারণ প্রয়োজন। এর একটি অুনলিপি তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাধবপুর, উপজেলা কৃষি অফিসার মাধবপুর, হবিগঞ্জ বরাররেও দেন।

স্বারকলিপির সূত্র ধরে বালু নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। পরে বালু নিলাম দরপত্রে ১লাখ ঘনফুট প্রাকৃতিক স্তুপাকারে পড়ে থাকা বালু ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি হয়।

কাগজে-কলমে নির্ধারিত স্থানের বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও নদীর অভিন্ন অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছেন এ বালু সিন্ডিকেট।

এতে সীমনা ছড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি, নদী, খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে অবাধে। সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রহস্যজনক কারণে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকরা অভিযোগ করেও প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

সীমনা নদীর বালু এখন বেদখলে। আবার মাঝে মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন নামমাত্র অভিযান চালালে বন্ধ হচ্ছে না। জব্দকৃত বালু উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী গোপনে নিলামে বিক্রি করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মহল এ বিষয়টি অবগত। উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ করেই চলছে সীমনা ছড়া থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন।

২০১০ সালের সরকারি বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।

নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও গোপনে মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এদিকে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা সীমনা নদীর ওপর বহুপুরাতন দেবে যাওয়া সেতু ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সেতুটির মাঝ অংশে দেবে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। অথচ সেতুর গোড়া থেকেও বালু উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে সেতুটি যে কোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

গত ২১ জুন শুধু কৃষি জমির বালি অপসারনের জন্য নিলাম দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১মাস আগ থেকেই সিমনা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। অথচ কাগজে কলমে নির্ধারিত কৃষি জমির বালু অপসারণের বিষয়টি বলা আছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের বালু নিলামপত্রে উল্লেখ রয়েছে বহরা ইউনিয়নের কিসমতপুর ও মনোহরপুর মৌজা বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়। সেখানে বালু না থাকায় দুর্বলপুর মৌজার সোনাই নদী থেকে ডেজার মেশিন ব্যবহার করে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়েছে।

এর পাশেই রয়েছে মনতলা তহশিল অফিস। গত ১৪ জুন প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর, সম্পদপুর ও ভান্ডারুয়া মৌজার কৃষি জমির ওপর সরকারি প্রায় ১ লাখ ঘনফুট প্রাকৃতিক স্তুপাকারে পড়ে থাকা বালু নিলাম দেয়া হয়।

নিলাম এলাকায় পড়েছে সীমনা ছড়ার পাড় ভেঙে শাহজাহানপুর মৌজার প্রায় ২ একর, সম্পদপুর মৌজার প্রায় ৪ একর ও ভান্ডারুয়া মৌজার নীল মোহনের বাড়ীর পশ্চিমে প্রায় ১ একর, ব্যক্তি মালিকানা কৃষি ভূমির ওপর সরকারি প্রায় ১ লাখ ঘনফুট প্রাকৃতিক স্তুপাকারে পড়ে থাকা বালু।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার নাজমা আরা খানম জানান, যে সকল বালু মহাল পূর্বে ইজারা দেয়া হয়েছিল বর্তমানে এ মহাল গুলিতে বালু না থাকলে নতুন করে কোনো ইজারা দেয়া হবে না। নিলামকৃত এলাকায় জব্দকৃত বালু না থাকলে নিলাম বাতিল হয়ে যাবে। নতুন ভাবে জব্দকৃত এলাকা বালু উত্তোলন করা যাবে না।

সীমনাছড়ায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান জানান, উত্তোলনকৃত বালু ও ফসলি জমির ওপরে যে বালু জট বেধে আছে সেগুলো নিলামে দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় । ফসলি জমির এক ইঞ্চি মাটিও নিতে পারবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/প্রতিনিধি//ওআর)