সাহিত্যের ‘বরপুত্রের’ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:২০

বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র-নাটক নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই বরপুত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতাল ইন্তেকাল করেন।

দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকাশকরা নুহাশ পল্লীতে কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং হুমায়ুন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া অন্য প্রকাশের পক্ষ থেকে নূহাসপল্লীতে সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকেনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়েজুর রহমান। একাত্তরে পাকবাহিনী তাকে হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ। স্কুল জীবনে হুমায়ূন আহমেদকে পিতার চাকরিস্থলে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়।

তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শংখনীল কারাগার’। এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ুন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। সেই থেকে জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্মক ও বিজ্ঞানস্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ বলেছেন সমোলোচরা। তিনি উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক, চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ুন আহমেদ গাজিপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’।

হুমায়ুন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ। এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বাসসকে বলেন, হুমায়ুন আহমেদ গত শতকের অন্যমত জনপ্রিয় লেখক। তার সৃষ্টিশীলতার জন্যই তিনি এই জনপ্রিয়তা পান। মৃত্যুর পরেও পাঠকরা তার বই ক্রয় করছেন । তরুণ সমাজ ও নতুন পাঠকরা এখনও তার বইগুলা কিনছেন। তার বই বিক্রয় খুববেশি কমেনি। পুরনো বইগুলো এখন বিভিন্ন বয়সের পাঠক সংগ্রহ করছেন। বাংলা সাহিত্যে এই লেখকের সৃষ্টি অনাদিকাল অক্ষয় থাকবে।

তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, জ্যোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, গল্প পঞ্চাশ, আমিই মিছির আলী, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, দিঘির জলে কার ছায়া গো, আজ হিুমর বিয়ে, লিলুয়া বাতাস, কিছু শৈশব, হুমায়ুন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, আগুনের পরশমনি, পাপ ৭১, শ্রাবন মেঘের দিন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে শংখনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও শ্যামল ছায়া।

সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ুন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। -বাসস

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :