সিংড়ায় হুমকির মুখে গ্রামছাড়া সাত কৃষক পরিবার

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫২

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিপক্ষ বাবা সুলতান বাহিনীর হুমকির মুখে সাত কৃষক পরিবার ২৫ দিন ধরে গ্রামছাড়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সালিশ করে দিলেও ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা গ্রামে ফিরতে না পেরে ভিনগাঁয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সাত পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন সিংড়া উপজেলার দুর্গম রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আমজাদ হোসেন, আনিস, রইস, মামুন, ফারুক হোসেন ও শহিদুল ইসলাম নামের সাত কৃষকের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে প্রতিপক্ষ বাবা সুলতানের লোকজন। এরপর সুলতান বাহিনীর অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকির মুখে ওই সাত পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

পরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা করে দিলেও এখনো নিজ গ্রামে ফিরতে পারেনি ওই সাত পরিবার। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্বাসের পর নারী সদস্যরা গ্রামে ফিরে গেলে আবার বাড়িঘরে হামলা করা হয় এবং নারী সদস্যদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। নির্যাতিত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ‘এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এনামুল, বাবা সুলতান ও তার ভাই ফেরদৌস বাহিনী আমার সুখের সংসার ভেঙে তছনছ করেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর ও চাল, ডাল, টাকা-পয়সা সব লুট করে নিয়ে গেছে। শুধু জীবনটা নিয়ে পালিয়ে এসেছি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কি আর বসত ভিটায় ফিরতে পারব না? এসব অন্যায় দেখার কি কেউ নেই?’

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবা সুলতান বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলে না বলে জানান নির্যাতিত কৃষক মামুন ও ফারুক হোসেন। তাদের ভাষ্য, ‘আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাদের হুমকির মুখে প্রায় এক মাস ধরে গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছি না।’

কৃষক আনোয়ার হোসেন, আয়েন উদ্দিন ও আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এত হামলা ও নির্যাতন মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারপরও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সালিশি সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখনো আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না।’ তবে এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন বাবা সুলতান ও ফেরদৌসের চাচা জাকির হোসেন। তিনি দাবি করেন, ‘তাদের গ্রামে আসতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। বরং

এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই সাত পরিবার মানসিকভাবে দুর্বল। তাই লোকলজ্জার ভয়ে তারা গ্রামে থাকে না।’ সালিশ বৈঠকে পক্ষপাতিত্ব হয়েছে দাবি করে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে বলে জানান তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, তারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। সালিশে উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু পরে একটি পক্ষ সালিশে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে আবার সালিশ বৈঠকের আবেদন করেছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখনো গ্রামের বাইরে অন্যত্র বসবাস করছে বলে জানান তিনি।

এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজার রাখার স্বার্থে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি সুরাহ করা হয় জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবীর উদ্দিন বলেন, ‘উভয় পক্ষই সহাবস্থানের অঙ্গীকার করে। কিন্তু এখন এক পক্ষ সালিশ মানছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনো সমঝোতার চেষ্টা চলছে।’

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নেয়ামুল আলম বলেন, সাত পরিবারের গ্রামে ফিরতে না-পারা নিয়ে কোনো অভিযোগ থানায় আসেনি। অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :