রাজশাহীর ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড

সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরের মধ্যে ভোটযুদ্ধের সম্ভাবনা

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ০৮:৪২

রিমন রহমান, রাজশাহী
বা থেকে আবু বাক্কার কিনু, রবিউল ইসলাম তজু, ইকবাল হোসেন ও সরিফুল ইসলাম বাবু

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে প্রচার-প্রচারণা। এই সিটির ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও তৎপর হয়েছেন প্রার্থীরা। তবে ভোটাররা বলছেন, এই দুই ওয়ার্ডে মূলত সাবেক ও বর্তমান দুই প্রভাবশালী কাউন্সিলেরর মধ্যেই তুমুল ভোটযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাসিকের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মাত্র তিনজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। তারা হলেন- ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু (ট্রাক্টর), বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম তজু (ঘুড়ি) এবং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি হাসিবুল হক (লাটিম)।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করেন। ওয়ার্ডজুড়েই রয়েছে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। আরেকটি বড় সমস্যা মাদক। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এ ওয়ার্ড থেকে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আবু বাক্কার কিনু। এবারও তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন।

আবু বাক্কার কিনু ঢাকাটাইমসকে বলেন, কিছু কাজ চলমান আছে। নির্বাচিত হলে সেগুলো শেষ করতে চাই। যেহেতু এই ওয়ার্ড শহরের প্রাণকেন্দ্রে, সেহেতু এই ওয়ার্ডটিকে ডিজিটাল ওয়ার্ড হিসেবে গড়তে চাই।

২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম তজু। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব ছাড়ার পর গত সাড়ে চার বছরে এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি আশা করছি, আমার অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা এবার আমাকে নির্বাচিত করবেন। কেননা, গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েও আমি মানুষের পাশে ছিলাম।

আবু বাক্কার কিনু ও রবিউল ইসলাম পাশাপাশি এ ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন বিএনপি নেতা হাসিবুল হক। তবে ভোটাররা বলছেন, এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর কিনু এবং সাবেক কাউন্সিলর তজুর মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ, হাসিবুল সেভাবে ভোটারদের কাছে পরিচিত নন। ফলে বর্তমান এবং সাবেক কাউন্সিলরের মধ্যে যেকোনো একজনকে বেছে নেবেন ভোটাররা।

নগরীর রাজারহাতা এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ওয়ার্ডটিতে ভাঙাচোরা রাস্তা আর যানজটের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান যিনি দিতে পারবেন, আমরা তাকেই নির্বাচিত করব।

নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডও বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু (টিফিন ক্যারিয়ার), বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন দিলদার (ট্রাক্টর), তরুণ প্রার্থী শিহাব চৌধুরী (রেডিও), হারুন-অর-রশীদ (লাটিম), নফিকুল ইসলাম (ঘুড়ি), আলিম উদ্দিন (ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট) এবং সেলিম শেখ (ঠেলাগাড়ি)

এ ওয়ার্ডে ১৯৯৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সরিফুল ইসলাম বাবু। এছাড়া তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবেও কাজ করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সরিফুল ইসলাম এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তার সঙ্গে বর্তমান কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন দিলদারের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

সাবেক ছাত্রনেতা সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি বিভাগীয় শহর রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র। এ ওয়ার্ড ঘিরেই রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু পরিচালিত হয়। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমি দায়িত্ব পালনকালে ওয়ার্ডটির জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। রাস্তাঘাট তৈরি করেছি। পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছি। এ ওয়ার্ডের সিংহভাগ উন্নয়নই হয়েছে আমার হাতে। তাই ভোটাররা এবার আমাকে নির্বাচিত করবেন বলেই বিশ্বাস করি। আর আমি নির্বাচিত হলে নিজের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে আমি নাগরিকসেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করব।

আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচন নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডে আমি অল্প সময়ে যথাসাধ্য উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে অনেক কাজ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শেষ করতে পারিনি। তাই ভোটারদের কাছে আরেকবার সুযোগ চাচ্ছি। এবার নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করলে সব কাজ শেষ করব।

এই ওয়ার্ডের ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন বলেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ড রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র। এখানে পুরো বিভাগের মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। সরু রাস্তাঘাটের কারণে যানজট থাকে। এসব সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। এগুলো সমাধানে যে প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দেবেন আমি তাকেই ভোট দেব।

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/আরআর/জেবি)