রাশিয়া-চীনে কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৮, ১৫:২০ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮, ১৫:২৫

আবুল কাশেম, ঢাকাটাইমস

গত শতাব্দীর চল্লিশ দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের কারণে বিশ্বের রাজনৈতিক অবস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রায় তটস্থ ছিলো। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী এই দুই পরাশক্তির মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত।

তবে শেষ পর্যন্ত ঠান্ডাযুদ্ধের ধকল সামলাতে না পেরে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে রাশিয়া। তারপর থেকে দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে একাই বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

নব্বই দশকের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মস্কোনদী আর হার্ডসন নদীর পানি গড়িয়েছে বহুদূর। এতটা সময় যুক্তরাষ্ট্রকে রাজ করতে দিয়ে বসে বসে দেখেনি তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও নব্য আভির্ভূত অর্থনৈতিক শক্তি চীন। প্রায় তিন দশক ধরে তারা সংস্কার করেছে ভেঙে যাওয়া ঘর। অতঃপর নিজেদের শক্তির জানান দিতে যুক্তরাষ্ট্রের একার রাজত্বে হানা দিতে পুরোপুরি তৈরি হয়েছে নেমেছে তারা।

গত মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ ও প্রমাণ যদি সত্যি হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজত্বে হতাশার ছাপ পড়তে শুরু করেছে।

এছাড়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু হবে না বলে যে হুঙ্কার দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার যথার্থতা হারাতে বসেছে। আর এ বাণিজ্য যুদ্ধে যে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারবে না তা স্বীকার করে সম্প্রতি সিআইএ কর্মকর্তা মাইকেল কলিন্স বলেন, ‘তারা (চীন) আমাদের সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা শুরু করেছে এবং সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। রাশিয়া যেটা করতে পারত তার চেয়ে এরা অনেক বেশি করবে।’

তিনি বলেন, “চীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিধর দেশ হতে চায়। আর তারা কোনওভাবেই সংঘাতে জড়াতে আগ্রহী নয়। বরং  কৌশলগতভাবে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'স্নায়ুযুদ্ধ' এর পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। আর এটিকে তিনি সোভিয়েত যুগের মত স্নায়ুযুদ্ধ নয় বরং প্রকৃত অর্থে 'স্নায়ুযুদ্ধ'।”

চীনের কৌশল সম্পর্কে কলিন্স বলেন, ‘কোনো সংঘাত ছাড়াই প্রতিপক্ষের ভিত টলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের অবস্থান তৈরি করতে একটি দেশ (চীন) বৈধ ও অবৈধ, সরকার ও বেসরকারি, অর্থনৈতিক ও সামরিক সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তারা সংঘাত চায় না।’

চীনের বর্তমান অবস্থান সর্ম্পকে কলিন্স বলেন, চীনের স্বার্থের প্রশ্ন এলে তারা চায় বিশ্বের প্রতিটি দেশ নীতি নির্ধারণী বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয় চীনের পাশে থাকুক।

উপরোক্ত কথাগুলো দ্বারা মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে চীনের বর্তমান কর্মকাণ্ডে ভীত যুক্তরাষ্ট্র। আর রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।

বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অর্থনৈতিক পরাশক্তিধর দেশ চীন শুধুমাত্র সরকারীভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছে তা নয়। বরং বেসরকারিভাবে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় অনলাইন কেনাবেচার মাধ্যম আমাজন ডটকমকে টেক্কা দিচ্ছে চীনের আলীবাবা।

অপর দিকে দেশটিতে ফেসবুক-গুগলের মত অনালাইন পরিসেবা অনেকটা নিষিদ্ধ। কারণ তাদের রয়েছে নিজস্ব এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

এছাড়া এশিয়া, ইউরোপের একাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজার করায়ত্ব করার পর আফ্রিকার দিকে নজর দিয়েছে চীন। সেখানে একচেটিয়া বাজার ধরতে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ করছে শি জিনপিং।

আর এসব ভেবেই সিআইএ কর্মকর্তা কলিন্স বলেছেন, চীন যে হুমকি তৈরি করছে সেটাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ।

একদিকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্রদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্বের রাজত্ব করা দেশটির এমন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য নেতৃ্ত্বে ট্রাম্প যে যোগ্য ব্যক্তি নন সেটি বলছেন খোদ মার্কিন বিশ্লেষকরাই।

কূটনৈকিত কৌশলে রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে এবং সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ট্রাম্প সরাসরি পরাজিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গত নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়া হিলারি ক্লিন্টন।

চীন ও রাশিয়া- এই দুই মিত্রের কৌশলের কাছে রাজত্ব ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আবারও চীন-রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্ব রাজত্ব ভাগাভাগি করতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এবার স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলে তা বিশ্বের জন্য যেমন খারাপ কিছু বয়ে আনবে ঠিক তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও।

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/একে/ডিএম