সেনা পদোন্নতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিবেচনায় রাখার নির্দেশ

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৮, ১৫:২২ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮, ১৯:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেনাবাহিনী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি উপলক্ষে পাঁচ দিনের সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন করার সময় এই নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।

রবিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের সদরদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন করা হয়।

আদর্শগত ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক এবং মুখ্য বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাঁদেরই হাতে যাঁরা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’

‘যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী এরূপ যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে, যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ আমাদের থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী সেনাসদরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সেনা বাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এই পর্ষদের মাধ্যমে লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল এবং কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে তার কন্যা বলেন, জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকেই তাঁর সরকার ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে।

সেনাবহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক পদাতিক ডিভিশন, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন, প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি এবং বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি।’

‘ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নকে প্যারা ব্যাটালিয়ন এবং মেকানাইজড ব্যাটালিয়নে রূপান্তরিত করেছি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র- ট্যাংক, এয়ার ক্রাফট, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

‘আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন (এআইটিএসও), আর্মি ডেটা সেন্টার ও কম্পিউটারাইজড ওয়্যার গেইম সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক আধুনিক যোগাযোগ সামগ্রী ক্রয় করা হচ্ছে।’

সেনাবাহিনীর কল্যাণে ট্রাস্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা, সেনা আবাসন প্রকল্প, সেনাসদস্যদের উন্নতমানের ও বর্ধিত স্কেলে রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করা, দুঃস্থ ভাতা বৃদ্ধিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘সেনাবাহিনীর কমান্ডো সদস্য, এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকগণকে উড্ডয়ন ঝুঁকি বীমার আওতায় আনা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং দেশের অবকাঠামো নির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভুয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাসদস্যদের গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।’

ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের উর্ধ্বে উঠে ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে সেনা কর্মকর্তাগণ এই নির্বাচনী পর্ষদ ২০১৮’র মাধ্যমে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, সশস্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেলারেল মাহফুজুর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং মেজর জেনারেল পদ মর্যাদার সেনা কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি