বাল্যবিয়ে বন্ধে যুবকের ছুটে চলা

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০১৮, ১২:৫২

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)

গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রতিটি অলিগলি যেন তার খুব পরিচিত। কারণ এই পথ ধরেই স্বেচ্ছাশ্রমে আট বছর ধরে বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করছেন আশিক নামে ২৫ বছরের এই যুবক।

সামাজিক সচেতনতায় কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। হতে হয়েছে শারীরিক নির্যাতনের শিকারও। তবু দমে যাননি আশিক।

তার অদম্য চেষ্টা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত এক বছরে উপজেলায় বন্ধ হয়েছে ৪৩টি বাল্যবিয়ে।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান আশিক। বাবার দরিদ্রতা তার পড়ালেখার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদ্রাসা হতে ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। ছোটকাল হতেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন আশিক।

২০০৮ সালে তার গ্রামে চোখের সামনেই এক কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হয়। কিশোরীটি তার স্বামীর সংসারে ঠিকভাবে মানাতে না পেরে শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের হাতে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে কিছুদিনের মধ্যে বাবার সংসারে ফিরে আসে। এ ঘটনায় তাকে বেশ পীড়া দেয়। এরপরই নারী ও শিশুকল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে নেমে পড়েন বাল্যবিয়ে বন্ধের কাজে।

২০০৯ সাল হতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বাল্যবিয়ের খবর সংগ্রহ করে তা প্রতিরোধে জোড়ালো ভূমিকা ছিল তার। নয় বছরে তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচশ বাল্যবিয়ে রোধ করেছেন। এছাড়াও তার চোখের আড়ালে যেসব বাল্যবিয়ে হয়ে যেত- তাদের পরিবারকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে স্বামীর সংসার হতে পূর্ণাঙ্গ বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সংসারে ফিরিয়ে আনা কিশোরীর সংখ্যাও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।

আশিক জানান, সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে প্রত্যেক মানুষের সামাজিক কিছু দায়িত্ব আছে। দরিদ্রতার কারণে পড়ালেখা করতে পারিনি, তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জীবিকার অন্বেষণে তাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। ছুটির দিনসহ কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বেরিয়ে পড়েন বাল্যবিয়ে প্রতিরোধসহ সামাজিক সচেতনতায়।

আগে হেঁটে কাজ করলেও স্থানীয় প্রশাসন তাকে একটি সাইকেল ও মুঠোফোন দেয়ায় তার কাজে অন্যরকম গতি এসেছে।

শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান জানান, আশিক হতদরিদ্র পরিবারের একজন সন্তান হয়েও নিজের জন্য পরিবারের জন্য না ভেবে শুধু সামাজিক নিরাপত্তা, নারী ও শিশু সুরক্ষায় কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পৌরসভার পক্ষ থেকে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার জানান, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের একটি ব্যধি। ধীরে ধীরে আমরা এ ব্যধি থেকে বেরিয়ে আসছি। এর মূলে রয়েছে সামাজিক প্রচার। এ কাজে আশিকের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গত এক বছরে আশিকের সহযোগিতায় উপজেলায় ৪৩টির মতো বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এ কাজে তাকে আরো উৎসাহ দিতে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশিকের হাতে একটি সাইকেল ও একটি মুঠোফোন তুলে দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)