আর্টিজান মামলায় অভিযোগপত্র, জীবিত আসামি আট

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:৫১ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশ কাঁপানো গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। যদিও এদের মধ্যে ১৩ জনই মৃত। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্তের পর এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

সোমবার পুলিশের জঙ্গি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে যে ২১ জনের নাম আছে, তাদের মধ্যে আট জন বিভিন্ন সময় অভিযানে ও পাঁচ জন হলি আর্টিজানে নিহত হয়েছেন। এছাড়া জীবিত আট জনের মধ্যে ছয় জন কারাগারে ও দুই জন পলাতক রয়েছেন।

কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলেন: জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর।

পলাতক দুই আসামি হলেন- শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান-২ এর অভিজাত রেস্টুরেন্টটিতে তোলপাড় করা এই হামলা করে জঙ্গিরা। ১৭ জন বিদেশি, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ এই হামলায় প্রাণ হারায় মোট ২২ জন।

পরদিন সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো অভিযান অপারেশন থান্ডারবোল্টে হামলাকারী পাঁচজনসহ মোট ছয় জন প্রাণ হারায়। এরা হলেন: রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

নানা সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন: তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকোলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক।

হামলার পর পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এর দায় স্বীকার করলেও তদন্তে আইএস, আল-কায়েদা বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া যায়নি বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

মূল পরিকল্পনাকারী সবাই নিহত

জড়িতদের মধ্যে সরাসরি হামলায় এছাড়া এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীকে। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশ সদর দপ্তর ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ মারা যান তিনি।

পরিকল্পনায় অন্যতম সহযোগী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমানের নাম। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় সারোয়ার জাহানের বাড়িতে র‌্যাবের অভিযান চালালে পাঁচ তলা থেকে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে নিহত হন সরোয়ার।

গুলশান হামলায় হামলাকারীদের আশ্রয় ও অর্থদাতা হিসেবে নাম এসেছে তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদের নাম। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুর এলাকায় সিটিটিসির এক অভিযানে নিহত হন তিনি।

ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী নুরুল ইসলাম মারজানকে গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীর সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক সহযোগীসহ নিহত হন তিনি।

মারজানের মতো বাশারুজ্জামান চকোলেটও শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে গুলশান হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন বাশার।

গুলশান হামলায় অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহে মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজানের ভূমিকা ছিলো বলে তদন্তে উঠে এসেছে। বাশারুজ্জামানের সঙ্গে একই দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা যান তিনি।

তদন্তে নাম এসেছে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া মেজর জাহিদুল ইসলামেরও। তিনি হামলাকারীদের প্রশিক্ষক ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন জাহিদ।

জাহিদের পাশাপাশি রায়হান কবির ওরফে তারেকও হামলাকারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। তারেক ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে আট সহযোগীসহ নিহত হন।

ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এএ/ডব্লিউবি