ভবন ডিজাইনের মূলমন্ত্র

প্রকৌশলী ইমদাদুল হক
 | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৬:১৫

যেকোনো কাজ শুরু করার আগে কাজের একটি রূপরেখা বা লে-আউট তৈরি করা খুবই দরকার। যেমন-কোনো দর্জি যখন পোশাক তৈরি করে তখন কাপড় কাটার আগে কাপড়ের ওপর এক ধরনের দাগ দিয়ে নেয়। পরে সেই দাগ অনুসারে কাপড় কাটে সেলাই করার জন্য। এই কাপড় কাটার আগে দাগ দিয়ে নেওয়াকে ওই পোশাকের জন্য লে-আউট দেওয়া বলা হয়। ঠিক তেমনি কাগজে আঁকা ভবনের নকশাকে প্রকৃত মাপজোপের মাধ্যমে জমিতে স্থানান্তর করাকে প্রকৌশলবিদ্যায় ভবনের লে-আউট দেওয়া বোঝায়।

ভবনের নকশা, কাগজের ওপর ছোট স্কেলে আঁকা থাকে। এখানে ড্রয়িংয়ের কাগজটিকে বাস্তব ভূমির ছোট সংস্করণ বলা যেতে পারে। কাগজে আঁকা নকশাটিকে প্রকৃত স্কেলে জমিতে চিহ্নিত করতে হয়, যাতে সহজেই প্রতিটি কলামের সঠিক অবস্থান, নির্মাণাধীন ভবনের ওরিয়েন্টেশন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- ভবনটি সীমানার ভেতরে আছে কি না তা নির্ণয় করা যায়। ড্রয়িং হলো প্রকৌশলীদের যোগাযোগের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। কোনো ভবনের লে-আউট দেওয়ার জন্য যে ড্রয়িং তৈরি করা হয় সেখানে সাধারণত a, b, c, d... I 1, 2, 3, 4... এই দুই ধরনের গ্রিডলাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। a, b, c, d... গ্রিডলাইনগুলো একে অপরের সমান্তরাল আবার ১, ২, ৩,... গ্রিডলাইনগুলোও পরস্পর পরস্পরের সমান্তরাল হয়ে থাকে। কিন্তু a, b, c, d...গ্রিডলাইনগুলো ১, ২, ৩, ৪... গ্রিডলাইনের সাথে সমকোণ তৈরি করে। এই দুই ধরনের গ্রিডলাইনের ছেদবিন্দুটিতে সাধারণত কলাম বা দেয়ালের অবস্থান করে থাকে।

লে-আউট দেওয়ার প্রধান কাজ হলো ড্রয়িংয়ে থাকা গ্রিডলাইনগুলোকে বাস্তবে মাপজোপের মাধ্যমে প্রকৃত জমিতে স্থানান্তর করা। কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সেই কাজটি প্রকৌশলীরা করে থাকেন। প্রথমে একটি বেসলাইন (Baseline) বা সীমারেখা নির্ধারণ করতে হয়। সীমারেখাটি সাধারণত পার্শ্ববতী কোনো ভবন বা রাস্তার মধ্যরেখা (পবহঃবৎষরহব) এর সমান্তরালে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে চিহ্নিত করা হয়। বেসলাইনের সমান্তরাল করে ড্রয়িংয়ে অঙ্কিত গ্রিডলাইনগুলো (a, b, c...) কে ভূমিতে স্থানান্তর করা হয়।

কিছু অস্থায়ী বাঁশের খুঁটির সাহায্যে এই গ্রিডলাইনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর যেকোনো একটি সুবিধামতো গ্রিডলাইনের (১, ২, ৩, ৪...) সাথে সমকোণে রেখে আরেকটি গ্রিডলাইন চিহ্নিত করা হয়। একইভাবে লম্ব বরাবর যে গ্রিডলাইন পাওয়া গেল সেগুলো সমান্তরাল করে আগের মতো আবার নতুন গ্রিডলাইন বসানো হয়। সাময়িক বা অস্থায়ী খুঁটির বদলে কংক্রিটের খুঁটি ব্যবহার করে গ্রিডলাইনগুলোকে স্থায়ী করে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে গ্রিডলাইনগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

লেভেল মেশিনের সাহায্যে রাস্তার চূড়ার তলের ওপর ভিত্তি করে ভবনে লেভেল নির্ধারণ করতে হয়। লেভেলের চিহ্নটি এমন এক স্থানে রাখতে হয় যেখানে সহজে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সহজে দেখা যায় ও ভবন নির্মাণের শেষ পর্যন্ত যেই স্থানের অস্তিত্ব থাকবে। পরস্পর লম্ব দুটি গ্রিডলাইনের ছেদবিন্দু থেকে কলাম ও ফাউন্ডেশনের সাইজ, অবস্থান এবং গভীরতা নির্ধারণ করা হয়। কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরস্পর লম্ব চারটি গ্রিডলাইনের দ্বারা আবদ্ধ বর্গক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ্য বারবার পরীক্ষা করতে হয় যাতে উক্ত গ্রিডলাইনগুলোর মাঝে ৯০ ডিগ্রি থাকে। কারণ আমরা জানি একটি পূর্ণাঙ্গ বর্গক্ষেত্রের কর্ণ দুটি সবসময় সমান থাকে।

ভবনের লে-আউট দেওয়া ভবন নির্মাণের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আসলে গণিতের জ্যামিতি বিষয়ের একটি পরিপূর্ণ ব্যবহারিক ঘটনা। ভবনে লে-আউট দিয়ে কাজ করলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন-ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।

ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ফোরম্যান বা মিস্ত্রি সঠিক-সুন্দরভাবে ও নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। নির্মাণ কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কলামের অবস্থান পুনঃপরীক্ষার জন্য স্থায়ী লে-আউটের প্রয়োজন হয়। ভবনের নকশা বা আসল জমিতে কোনো রকম সমস্যা থাকলে লে-আউট চলাকালীন সময়ে সংশোধন করা যেতে পারে।

ভবনের লে-আউট দেওয়ার জন্য আজকাল টোটাল স্টেশনের বহুল ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু ডিজিটাল সার্ভে কোম্পানি আছে যারা টোটাল স্টেশনের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে ইমারতের লে-আউট দিয়ে থাকে। লে-আউট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো হলো-টোটাল স্টেশন বা লেভেল মেশিন, নাইলনের সুতা, পেরেক, হাতুড়ি, অস্থায়ী বাঁশের খুঁটি, স্থায়ী কংক্রিটের খুঁটি, স্টিলের একটি বড় সমকোণী ত্রিভুজ, স্টীল টেপ (১০০ ফুট), মাঝারি সাইজের প্লাম্ব বব বা ওলোন।

ইঞ্জিনিয়ার ইমদাদুল হক: উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল)

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :