বিএনপিও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি: সাকি
নবগঠিত ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বলয়ের বাইরে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন জোটের শরিক জোনায়েদ সাকি। বর্তমান সরকারকে যেমন তিনি গণতান্ত্রিক মনে করেন না, তেমনি বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপিও গণতান্ত্রিক ছিল না।
তাই এই দুই দলের বাইরে কার্যকর গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক।
গত ১৭ জুলাই মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জোটের সদস্যরা হলেন: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টায় থাকা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২০ জুলাইয়ের জনসভায় নতুন এই জোটের সঙ্গেও ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সাকি জানিয়েছেন, এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না তারা।
বাম জোটের নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় থেকে স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে। এই শাসনের অবসানের জন্য আমরা লড়াই করছি এবং একই সাথে আওয়ামী বলয়, বিএনপি বলয়ের বাইরে জনগণের শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
বিএনপিকে আলাদা চোখে দেখছেন না সাকি। বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারাও স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে নাই। তারাও বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের কর্মসূচি দরকার তা এখনও তাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। ফলে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে রাজনৈতিক লক্ষ্য ও আদর্শ অনুসরণ করে অন্দোলন করে যাচ্ছি।’
বামদের জোট গঠনের উদ্যোগের বয়স এক বছর জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই বামপন্থী গণতান্ত্রিক দলগুলো এক সাথে কাজ করার পরিকল্পনা চলছিল। এটা আরও এক বছর আগে নেয়া সিদ্ধান্ত যে আমরা যারা এককভাবে কাজ করতাম, এখন এক নামে, এক সাথে কাজ করব। কাজের ধারাবাহিকতায় এখন আমরা এক নামে এক মঞ্চে।’
জোটের লক্ষ্য সম্পর্কে এই নেতা বলেন, ‘আমরা বর্তমান দুঃশাসনের অবসান চাই। স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। তার জন্য আমাদের কর্মসূচি আছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনতান্ত্রিক ও আর্থসামাজিক অনেকগুলো পরিবর্তন কর্মসূচির ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা একটি জায়গায় পৌঁছে দিতে চাই।’
বাম আন্দোলনে এই জোট খুবই কার্যকরী হবে বলেও মনে করেন সাকি। বলেন, ‘আমরা আশা করি, জোট গঠনে বামপন্থীদের আমাদের লড়াই সংগ্রাম এবং সংগ্রামী উদ্দেশ্যটা আরও সম্প্রসারিত হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আরও তড়ান্বিত হতে পারব।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনগুলোতে নব গঠিত বাম দলীয় জোটের ইতিবাচক প্রভাব পরবে বলেও মনে করেন সাকি।
রাজশাহীতে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা মুরাদ মোর্শদ মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। তার অবস্থান সম্পর্কে সাকি বলেন, ‘অল্প কিছু সংবাদ মাধ্যম বাদ দিলে বাকিরা কেবল দুইজন প্রার্থীকেই প্রচার করছেন। কার্যত আমাদের প্রচার নাই বললেই চলে। আমাদেরকে জনে জনে প্রচার করতে হচ্ছে।’
‘সব কিছুর পরেও আমরা জনগনের থেকে সাড়া পাচ্ছি, মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা তাদের এই প্রার্থীকে পেয়ে খুশি। ’
‘মানুষ পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে। শিক্ষিত থেকে শুরু করে সাধারণ অটোরিকশা চালক, দিনমজুর সবাই ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। বাস্তবে ভোট কতটুকু পড়বে তা নির্ভর করবে ভোটের দিন জনগণ ভোট দিতে পারবে কি না তার উপর।’
নতুন জোটের শরিকরাও রাজশাহীতে মোর্শেদের পক্ষে আছে বলে জানান সাকি। বলেন, ‘বাসদ প্রত্যক্ষভাবে, আন্তরিকভাবে আমাদের সাথে প্রচারণায় আছে। কমিউনিস্ট পার্টির সাথে কথা হয়েছে তারাও আমাদের সমর্থন করেছেন। তারাও নামবে আশা করি।‘
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বাম দলের প্রার্থীদের হাজারের নিচে ভোট পাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাম নেতা বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়, বাংলাদেশে সেটা দিন দিন দানা বাধছে। এই অত্যাচার অনাচার চিরস্থায়ী নয়।’
ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/কারই/ডব্লিউবি