এনামুল, আনামুল নাকি বিজয়?
প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪২ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৩
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ওয়ানডে অনেক রাত জেগে দেখেছি।দারুণ উপেভোগ করেছি ম্যাচটা।টেস্টে বাজেভাবে হারার পর এই জয় দরকার ছিল টাইগারদের জন্য। তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন এনামুল হক বিজয়। তিনি কোনো রান করতে পারেননি। কিন্তু আমার বিষয় এটা নয়। আমি কথা বলছি বিজয়ের নাম নিয়ে। জার্সি নিয়ে।
তিনি বিজয় নাম লেখা জার্সি পরে খেলতে নেমেছিলেন। এখানেই আমার আপত্তি।পৃথিবীর কোনো দলে এমন নজির নেই। মানে জার্সিতে কেউ নিক নেইম বা ডাক নাম ব্যবহার করা হয় না। শুধু জার্সিতে কেন, অফিসিয়ালিও ডাক নাম ব্যববহার করা হয় না। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে।
একদিন বেতারে শুনলাম এনামুল হক বলা হচ্ছে। অথচ টিভিতে শুনলাম বিজয়। নতুনদের কাছে এটা খুবই বিভ্রান্তিকর। কে বিজয় আর কে এনামুল? এটা একটা দ্বিধার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
এনামুল হক বিজয়।কেউ আবার এনামুল না লিখে আনামুল লিখেন।কিছু মিডিয়া আবার বিজয় নাম ব্যবহার করে না।আসলে কোনটা সঠিক?সাধারণ পাঠক এতে বিভ্রান্তের শিকার হতে বাধ্য। আমি মনে করি, বিজয় না লিখে তার জার্সিতে এনামুল বা আনামুল যাইহোক সেটা লেখা উচিৎ।
খবরের কাগজে দেখলাম, একেক দৈনিকে একরকম লেখা হয়েছে।কোনো কাগজে লেখা হয়েছে মুমিনুল, আবার কোনো কাগজে সৌরভ। এটা খুবই খারাপ ব্যাপার। কারণ রেকর্ড বইয়ে যে কোনো একটি নাম থাকবে। তখন কে সৌরভ বা কে মুমিনুল- এ নিয়ে খটকা লাগবে।
বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, কিন্তু দু:খ লাগে নামের কারণে ক্রিকেটাররা ক্রিকেট থেকে একসময় হারিয়ে যাবে। বিশ্বের নামি দামি খেলোয়াড়দের নাম যুগ যুগ থাকবে। আমরাও চাই বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নাম যুগ যুগ ধরে বিশ্ব বাসির কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকুক। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের নাম আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের নামের সঙ্গে সমন্বয় থাকা একান্ত প্রয়োজন।
বিশ্ব ক্রিকেটে ইমরান খান, কপিল দেব, শচিন টেন্ডুলকার, গাভাস্কারদের নিক নেম বা ডাক নাম থাকলেও, তাদের এই নিক নেম(ডাক নাম) ক্রিকেটে ব্যবহার হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিক নেম ব্যবহার করেন খুব বেশি। যেটা বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়।
যেমন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুর কথাই ধরা যাক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মুল নাম ব্যবহার না করে বুলবুল, গুল্লু নামে ডাকা বা বলা হয়। কিন্তু দেশের বাইরে এই নামে কেউ চিনেন না। মানে দেশে একরকম, দেশের বাইরে আরেকরকম। অনেক সময় দেশের মধ্যেই ডাক নাম ও আসল নাম- দুটোই ব্যবহার হওয়ার কারণে বিভ্রাট দেখা দেয়। কারণ কেউ নিক নেমে ভালো চিনেন, আবার কেউ নিক নেমে চিনেনই না।
এখন ভাবুন,২৫ বছর পর যখন প্রশ্ন উঠবে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি কে করেছিলেন?নিশ্চয়ই উত্তর আসবে-বুলবুল।কিন্তু রেকর্ড বই সেটা বলবে না। এখানে বুলবুল নাম থাকবে না। থাকবে আমিনুল ইসলাম।তখন অনেকেরই খটকা লাগবে।প্রশ্ন উঠবে,বুলবুল কে? আমিনুল ইসলাম কে? কারণ নতুন প্রজন্ম তো আর এদের চিনেন না।
ইংল্যান্ড সফরে একবার স্কোর বোর্ডে ব্যাটসম্যান আফতাব আহমেদের নামের শেষে চৌধুরী জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রেকর্ড বইয়ে কিন্তু চৌধুরী হিসেবেই থেকে যাবে। বছর জুড়ে শুনলাম আফতাব আহমেদ। ইংল্যান্ড সফরে আফতাব চৌধুরী! অথচ যে কোনো একটি নাম ব্যবহার করলে এটা হতো না।
আমার প্রশ্ন হলো, রেকর্ড বইয়ে যেহেতু একটা নাম ব্যবহার হয় তাহলে এতবড় নাম দরকার কি? নিক নেমের দরকার কোথায়? খেলোয়াড়দের এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে যে কোনো একটি নাম ঠিক করে সেটাই ব্যবহার করা উচিৎ।
নামের বিভ্রাট বাংলাদেশেই বেশি হচ্ছে। শুধু খেলোয়াড়দের নামই নয়, স্টেডিয়ামের নামেও বিভ্রাট লক্ষ্য করছি। যেমন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। এটাকে আবার সাগরিকাও বলা হয়ে থাকে। বীর শ্রেষ্ঠ রহুল আমিন স্টেডিয়াম বা চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়াম। আবার ফতুল্লা স্টেডিয়ামের আসল নাম খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। কিন্তু আসল নামে কজন চিনেন?
খেলোয়াড় বা স্টেডিয়াম হোক, নাম যথাসম্ভব ছোট এবং একই হওয়া উচিৎ। নইলে একদিকে যেমন বিভ্রাট, তেমনি পরিচিতিতেও সমস্যা।অথচ অন্য দেশের দিকে তাকান। ওভাল, লর্ডস, ইডেন গার্ডেন- আমরা এক নামে চিনি।
খেলোয়াড়দের নাম অবশ্যেই বড় থাকে, তা সে যে কোনো দেশের খেলোয়াড়ই হোন। কিন্তু আমাদের দেশের মতো তারা পুরো নাম ব্যবহার করেন না। যেমন ইমরান খান নিয়াজি, সনীল মনোহর গাভাস্কার, মাজিদ খান জাহাঙ্গীর। তারা কিন্তু পুরো নাম ব্যবহার করেননি। নির্দিষ্ট নামে পরিচিত হয়েছেন।
আমাদের খেলোয়াড়দেরও উচিৎ এটা অনুসরণ করা।নিক নেম বা ডাক নাম পরিহার করা। এত করে নাম বিভ্রাট যেমন দূর হবে, তেমনি বিশ্বে তাদের পরিচিত হওয়ার ব্যাপারটাও সহজ হবে।
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : প্রথম সহ-সভাপতি, রিহ্যাব