ভল্টের সোনা: এনবিআরের ভূমিকায় নাখোশ মুহিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বলেছেন, তাদের এ বিষয়ে কথা বলার দরকারই ছিল না।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধন হয় এই ডিসি সম্মেলন। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের আলাদা বৈঠক হবে সচিবালয়ে। প্রথম দিন সচিবালয়ের অধিবেশনে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী।
তবে অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণের বিষয়ে।
সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দৈনিক প্রথম আলো দাবি করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ এবং আংটি মেপে পরে তাতে স্বর্ণের পরিমাণ কম পাওয়া গেছে। ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ পরে মেপে ১৮ ক্যারেটের হয়ে গেছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় হয়। কীভাবে স্বর্ণ কমে গেল, সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিও। এখানে দুর্নীতির অভিযোগও তুলছেন দলটির নেতারা।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি পুরোপুরি ভুল বুঝাবুঝি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মাপার সময় স্বর্ণের অনুপাত ৪০ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এটি ইংরেজিতে লেখার সময় 80 (৮০) লেখা হয়েছে। এ নিয়ে পরে শুল্ক গোয়েন্দাকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এটি মানতে চাইছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে যে, এ নিয়ে বিরোধে তৈরির পর এনবিআর চিঠি দিয়ে যেসব প্রশ্ন করেছে, তার প্রতিটির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা নিয়ে এনবিআরের কোনও কথা বলারই প্রয়োজন ছিল না। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। সোনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকই সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ বিষয়ে উঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কোনো কমিটি করবেন কি না, এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য কোনও কমিটির দরকার নেই। যা করার বাংলাদেশ ব্যাংকই করবে।’
মুহিত বলেন, ‘৯৩৬ কেজি সোনার মধ্যে দূষিত সোনার পরিমাণ মাত্র তিন কেজি। তাও পুরোটা নয়। কাজেই এটি বড় কোনও সমস্যা নয়।’
এ সময় জনতা ব্যাংকে থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের নেয়া ঋণ অনিয়ম নিয়েও অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক। তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। বলেন, ‘এটি এখানে বলব না। পরে অন্যসময় বলব।’
ভোটে গণ্ডগোল হবে না, আশায় মুহিত
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনে ব্যাপক নাশকতার মধ্য দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ‘অতীতে নির্বাচনের সময় গণ্ডগোল হতো, এখন আর তা হয় না। আশা করছি আগামী নির্বাচনেও কোনও গণ্ডগোল হবে না।’
নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা ‘রুটিন’ কাজ করবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়ে মুহিত বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছি। এক সময়ে ৯৩ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হতো। এখন এই হার কিছুটা নেমেছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের হার আশা করছি ৯০ শতাংশ হবে।’
‘১ জুলাই থেকে কাজ শুরু করার জন্য বলেছি। পিডিকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) একসঙ্গে তিন কিস্তির টাকা ছাড় করার ক্ষমতা দিয়েছি, যাতে কাজ দ্রুত করা হয়। টাকার জন্য যেন কাজ আটকে না থাকে।’
‘ডিসিদের বলেছি—সম্পদের অভাব নাই। আপনারা কাজ করুন।’
ডিসিরা কী সমস্যার কথা বলেছেন-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিসিরা সরকারের অবকাঠামো পুরনো বলে জানিয়েছে। যার কারণে অনেক জরুরি কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের কথা বলেছেন।’
‘আমি বলেছি—পর্যায়ক্রমে অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ চলছে। চলমান আছে এবং চলবে।’
ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এমএম/ডব্লিউবি