রোদে পোড়া শিক্ষার্থীদের ফুলে সিক্ত মন্ত্রী

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মহিলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আসবেন সকাল সাড়ে ১০টায়। নয়টার আগেই আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন চত্বর থেকে সমাবেশস্থল পৌর শহরের নাছরিন নবী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাতে ফুলের পাপড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী। মাথার ওপর ছায়া নেই, শ্রাবণের কাঠফাটা রোদে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হলো আড়াই ঘণ্টা।

আইনমন্ত্রী পৌঁছালেন ১১টা ১৭ মিনিটে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন পোঁছাল আখাউড়া স্টেশনে। আন্তঃনগর মহানগর প্রভাতী ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নামেন আইনমন্ত্রী। রোদে পোড়া শিক্ষার্থীদের ফুলের পাপড়িতে সিক্ত হলেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর ঘটনায় পরে বিরক্তি প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী-এমপি কিংবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সফরের সময় তোদের স্বাগত জানাতে সড়কের দুই পাশে শিক্ষার্থীদের দাঁড় করানো নিয়ে সমালোচনা মুখে সাম্প্রতিক সময়ে কমে এসেছে এই প্রবণতা। এমনকি শিক্ষার্থীদের সড়কে দাঁড় না করাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও রয়েছে।

তা উপেক্ষা করে আজ আইনমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে রোদের মধ্যে সড়কে দাঁড় করানো হয় শিক্ষার্থীদের। সারিতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা জানায়, মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা ফুল ছিঁটাতে এসেছে। সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর আদর্শ বিদ্যালয়, টেকনিক্যাল আলিয়া মাদ্রাসা ও নাছরিন নবী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসব শিক্ষার্থী।

সড়কে দাঁড়িয়ে নবী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পিচঢালা রাস্তায় তপ্ত রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। জানা যায়, ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় এনে দাঁড় করাতে শিক্ষদের নির্দেশ দেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও যুবলীগ নেতা তাকজিল খলিফা।

মেয়রের নির্দেশে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রায় আড়াই ঘণ্টা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়াতে বাধ্য হয়।

শিক্ষার্থীরা ঢাকাটাইমসকে জানায়, সকাল নয়টার আগে থেকে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের গেট থেকে সড়কবাজার হয়ে নাছরিন নবী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমাবেশস্থল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তাদের ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কী কারণে দাঁড়িয়ে আছে কলেজের শিক্ষার্থীরা বলতে পারলেও স্কুলের শিশুশিক্ষার্থীরা কিছু বলতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের এভাবে রাস্তায় নামানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অসন্তোষ কণ্ঠে তাদের ভাষ্য, ‘যুবলীগ নেতা ও মেয়র সাহেব আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে বলেছেন। তাই ছুটির দিনেও রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদেরই কষ্ট হচ্ছে, শিশুদের তো হবেই। কিন্তু কিছু করার নেই।’

মেয়রের এই নির্দেশকে অত্যন্ত নিন্দনীয় হিসেবে উল্লেখ করে আখাউড়ার একজন সরকারি কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তিনি অতি উৎসাহী হয়ে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে এ কাজে বাধ্য করেছেন।’

ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাছরিন নবী গার্লস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আসার আগে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল মন্ত্রী মহোদয়কে অভ্যর্থনা জানাতে।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড়াতে তিনি কোনো নির্দেশ দেননি বলে দাবি করেন আখাউড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তাকজিল খলিফা। তিনি বলেন, ‘এলাকায় মন্ত্রী আসবেন। শিক্ষার্থীরাও মন্ত্রীকে দেখতে চায়। তাই পৌর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বলা হয়েছিল সহযোগিতার জন্য। শিক্ষার্থীদের দিয়ে সহযোগিতা করেছেন শিক্ষকরা। আমি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করিনি।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :