শ্রীপুরে মুক্ত নিঃশ্বাসের দাবিতে মানববন্ধন

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৭:১১

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকায় কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা। এই গ্রামের আনসার রোড শ্রীপুর সড়কের পাশেই একদিকে রয়েছে কেওয়া পূর্বখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত দুই বছর আগে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে গ্যালি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যাটারি তৈরির কারখানা। যেখানে পুরাতন ব্যাটারি রূপান্তরিত করে নতুন ব্যাটারি নির্মাণ করা হয়। আর এতে বিষাক্ত এসিডের প্রকট গন্ধে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়রা নানাভাবে পরিবেশ বিষাক্ত করার প্রতিবাদ করেও ফল না পেয়ে অবশেষে মুক্ত নিঃশ্বাসের দাবিতে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কেওয়া পূর্ব খণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে স্থানীয়দের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ও অভিভাবকরা। আগামী শনিবারের মধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে নিজেদের উদ্যোগেই কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে মানববন্ধন ঘোষণা দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এই এলাকার বরুণ বাবু ও মৃত আবুল হোসেনের মাসুদুর রহমান, মহসিন ও মজিবরের কাছ থেকে প্রায় ১৬ বিঘা জমি মাসিক ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৬ সাল থেকে পুরাতন ব্যাটারি ভেঙে নতুন ব্যাটারি তৈরি করে আসছে। এতে পুরাতন ব্যাটারি সীসা গলিয়ে নতুন ব্যাটারি তৈরির সময় তা পুড়ানো হয়। সীসা পুড়ানোর সময় সৃষ্ট ঝাঁঝালো গন্ধ ধোঁয়ায় চোখ ও মুখমণ্ডল জ্বালা পোড়া করে। নির্গত বিষাক্ত লেড অক্সাইড গ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থী, মরছে গবাদিপশু, নষ্ট হচ্ছে সবজি, ফল, গাছপালাসহ কৃষকের ধান ক্ষেত।

স্থানীয় সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারখানার আশপাশের ঘাস খেয়ে এ পর্যন্ত তার তিনটি নিয়ে গরু মারা গেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি তিনি।

কেওয়া গ্রামের শামসুদ্দিন জানান, তিনি এবছর সাত বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। কারখানার বিষাক্ত অপরিশোধিত বর্জ্য ধান ক্ষেতে গিয়ে তার পুরো সাত বিঘা জমির ধান গাছই নষ্ট হয়ে গেছে।

শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমিজ উদ্দিন জানান,কোন নিয়মনীতি না মেনে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কিভাবে এই কারখানা চলছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে সরকারের কাছে আমরা মুক্ত নিঃশ্বাসের দাবি জানাই। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার লোকের জীবন বাঁচাতে অন্তত এই প্রাকৃতিক অধিকারটুকু আমাদের ফিরিয়ে দিন।

কেওয়া পূর্বখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আকতার জানান, বিদ্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যে এমন একটি রাসায়নিক কারখানায় মারাত্বক হুমকিতে বিদ্যালয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী। কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার পর তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অনেক অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেয়ে বিদ্যালয় হতে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে প্রতিনিয়ত অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাশিদা আকতার জানান, তার মেয়ে কেওয়া পূর্বখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। গত বুধবার (২৪জুলাই) বিদ্যালয় থেকে ফিরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিলে সে সুস্থ হয়।

অপর অভিভাবক আব্দুর রহিম জানান, আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে শিক্ষা অজর্নের জন্য পাঠাই কিন্তু তারা অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে। আর স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই এ ব্যাপারে নীরব। সবাই সবার স্বার্থের জন্য কাজ করছে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা কেউ ভাবে না।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে কারখানাটির মূল ফটক বন্ধ করে রাখায় কারখানার কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :