১৭ হাজার ধর্ষণ মামলা নিয়ে উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৯

‘গত চার বছরে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের ১৭ হাজার ৩৮৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দেয়া তথ্য উদ্ধৃতি করে এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘এটা উদ্বেগের। বর্তমানে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যারা ধর্ষণের সঙ্গে জাড়িত তাদের ওপর একটি গবেষণা করে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করার জন্য রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও গণসচেতনতাই পারে নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে।’

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন (ডুফা ) আয়োজিত ‘নারী-শিশুর প্রতি নির্যাতন এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে ডুফার পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানজিদা খান রিপা, ব্যারিস্টার কামরুন মাহমুদ দিপা এবং জাহিদুল কবীর টিটু।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দশ বছর হওয়ার আগেই দেশে ৫ দশমিক ১৭ নারী যৌন নীপিড়নের শিকার হচ্ছে। ২০১৪ এর জানুয়ারি থেকে ২০১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ হাজার ৩৮৯টি নারী ও শিশু ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়, যার মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ জন ভুক্তভোগী নারী ও তিন হাজার ৫২৮ জন শিশু। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, ২৯ জন যৌন হয়রানি ও ১৯ জন ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নত্তোর পর্বে জানিয়েছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের ১৭ হাজার ৩৮৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব মামলার ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৩ হাজার জন নারী ও তিন হাজার ৫৫২ জন শিশু।

নেই যথাযথ সহায়তা

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, যথাযথ সহায়তা ও সুরক্ষা না পাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর পরিবারের সদস্যরা নীরব থাকেন। আবার অনেক সময় ভুক্তভোগীর পরিবার নিজেদের অবস্থান, লোকলজ্জা, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক গঞ্জনার আশঙ্কায় থানায় গিয়ে মামলা করে না। ভুক্তভোগী এসব নারী বা শিশু এক ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করে। নীরব এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন। একেএম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। নারীনেত্রী খুশি কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. সানজিদা আক্তার, ডুফার সেক্রেটারি ড. নেয়ামুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যারা ধর্ষণের সাথে জড়িত তাদের ওপর একটি গবেষণা করে এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক উল্লেখ করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজকে নারী ও শিশুবান্ধব করতে হবে।

নারীনেত্রী খুশী কবীর সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কথা বলেন। এতে করে নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, পুরুষ মানেই নারীর চেয়ে শ্রেয় ও কর্তৃত্ববান এবং নারী মানেরই বিনয়ী- এরকম ভুল ধারণা নিয়ে এই সমাজে সবাই বড় হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।

ড. সানজিদা আক্তার সমাজের সব স্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জয়নুল আবেদিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ কমিয়ে আনতে হলে সব পর্যায়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সোস্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক দিক নিয়ন্ত্রণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত কর কমিশনার অরুণ কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দীকা আক্তার লাকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা, ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মনিনুর রশীদ, ধীমান রয়, লুনা খান, জিয়াউল কবীর সুমন প্রমুখ।

আলোচকরা বলেন, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে, কারণ কোনো ধর্মই নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন সমর্থন করে না। একই সঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গরে তুলতে হবে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ সম্পর্কে সচতন করে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন আত্মরক্ষামূলক কৌশল শেখানো জরুরি বলে মনে করেন আলোচকরা।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা