গরু মোটা-তাজাকরণ, স্বপ্নে ভাসছেন খামারিরা

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৮, ১৩:৪২

মৌসুমী ব্যবসা গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ। প্রতি বছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার প্রান্তিক কৃষক ও খামারি লাভজনক এ ব্যবসায় নামেন। এবারও ঈদকে সামনে রেখে গবাদি পশুর শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। স্থানীয় পশুসম্পদ অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান এসব গবাদিপশু বিক্রি থেকে লাভের অংক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা তাদের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, এবার শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার পাঁচশ ৭৩ জন প্রান্তিক কৃষক পরিবার গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের আওতায় এসেছে। এর বাইরেও রয়েছে কয়েকশ ছোট-মাঝারি খামার। এসব খামারে জীবনমান উন্নয়নে গবাদি পশুর সংখ্যা ২০ হাজারের উপরে। যদিও শ্রীপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৭ হাজারের মত। তিন ও ছয় মাস মেয়াদী মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে এবারই প্রথমবারের মত কৃষকদের বিনামূল্যে কাঁচাঘাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের নজরদারি থাকায় কোন কৃষক গবাদি পশুতে ক্ষতিকর কোন কিছু প্রয়োগ করতে পারেনি। গবাদিপশুর বাজার ভালো থাকলে এসব পশু বিক্রির আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

চাউবন গ্রামের হতদরিদ্র রিনা বেগম স্বামীকে হারিয়েছেন সাত বছর হলো, স্বামীর সহায় সম্বল বলতে ছিল শুধু বাড়িঘর। দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমসিম খাওয়ার পর গত বছর নিজের জমানো সাড়ে সতের হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছিলেন। পাঁচ মাস যত্ন করে গরুটি তিনি বিক্রি করেছেন পয়ত্রিশ হাজার টাকায়। এবার তিনি দুইটি গরু কিনেছেন, তার আশা এবার লাভের অংক ত্রিশ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এখন তার আর কোন দুশ্চিন্তা নেই, অন্তত মৌসুমী এই ব্যবসা তাকে দিশার সন্ধান দিয়েছে।

মুলাইদ এমসি বাজার এলাকার ভাই ভাই খামারের মালিক আবু সাইদ জানান, তিনি প্রথম প্রথম ইদের পাঁচ ছয় মাস আগে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দুর্বল স্বাস্থ্যের গবাদি পশু সংগ্রহ করতেন, পরে বাড়িতে এনে বিশেষভাবে যত্ন করে ঈদে বিক্রি করতেন। এতে তার ভালো লাভ হতো। গত বছর তার এ ব্যবসায় লাভ হয়েছিল প্রায় দশ লাখ টাকা। এবার আরো বড় পরিসরে স্থানীয় একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৭০টি গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এতে তার আশা, খরচ বাদে লাভ হবে পনের লক্ষ টাকা।

বাউনি গ্রামের কফিল উদ্দিন জানান, গরু মোটাতাজাকরণ একটি মৌসুমী ব্যবসা, স্থানীয় পশু অফিসের নির্দেশনায় অন্য পেশার সাথে সাথে এটি করা যায় এতে বাড়তি আয় হয়। তিনি এ বছর চারটি গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এর লাভ দিয়ে তিনি এবার থাকার ঘর পাকা করবেন।

নানাইয়া গ্রামের ফজলুল হকের মতে, তারা গবাদি পশুকে কোন ক্ষতিকর কোন কিছু খেতে দেন না। দেশীয় খাবারের সাথে পশু কর্মকর্তার পরামর্শ মতে নানা ধরনের ভিটামিন প্রয়োগ করেন। এতে অল্প দিনেই পশুর চেহারায় পরিবর্তন হয় দামও বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তিনি গত সাত বছর ধরে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এতে তার পরিবারের সার্বিক জীবন মান উন্নত হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, বর্তমান সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছি। তবে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে আমাদের গবাদি পশুর চাহিদার কথা বিবেচনা করে কৃষকদের গরু মোটাতাজাকরণে উৎসাহ দিয়ে থাকি। কোন কৃষক বা খামারি যাতে গবাদি পশুতে ক্ষতিকর কোন কিছু প্রয়োগ করতে না পারে তার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস মোটাতাজাকরণে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকে। এবারও উপজেলায় বিশ হাজারের উপর গবাদি পশু বিক্রির উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে যা থেকে লাভের অংক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে, এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :