বাবার সৎকার করায় চার মেয়েকে গ্রামে একঘরে
বাবার অন্তিম ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর মেয়েরাই তার সৎকার করবে। মারা যাওয়ার পর চার মেয়েও বাবার ইচ্ছে পূরণ করেছে। কুসংস্কার আর নারী-পুরুষ বিভেদের মুখে আগুন দিয়ে বাবার যাবতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেছেন চার মেয়েই।
কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলে এমন কুঠারাঘাত সহ্য হয়নি মাতব্বরদের। তাই একঘরে করার নিদান দিয়ে নিয়ন্ত্রণের রশি আরও শক্ত করতে চেয়েছেন ওই গাঁয়ের মোড়লরা। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বুন্দি জেলার এই ঘটনায় একদিকে যেমন চার কন্যার বীরগাঁথা সামনে এসেছে, তেমনই ভারতবর্ষের গ্রাম গ্রামান্তরে এখনও যে গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থার বেড়ি পরানো, উঠে এসেছে সেই ছবিও।
এ গল্প চার কন্যার। বলা যেতে পারে চার বিদ্রোহিনীর। রাজস্থানের বুন্দি জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের। ৫৮ বছর বয়সী দুর্গাশঙ্কর টেইলর মারা যাওয়ার আগেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তার অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করবে মেয়েরাই। মেয়েরাও তাতে কোনও সমস্যা দেখেননি। কিন্তু সেটা জানাজানি হতেই মোড়ল-মাতব্বররা হুমকি দিতে থাকে, এ কাজ করলে ফল ভালো হবে না।
শনিবার মৃত্যু হয় দুর্গাশঙ্করের। ফতোয়ার ভয়ের চেয়েও বাবার ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বাঁশের মাচায় শোয়ানো বাবার দেহ চার দিকে চার বোন কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছেন শ্মশানে। সেখানে মুখাগ্নি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম সেরেছেন। আত্মীয় পরিজন বা পরিবারের অন্য সদস্যদের কেউই তার মধ্যে কোনও অন্যায় দেখেননি।
দেখেছেন সমাজ-শাসকরা। ঔদ্ধত্য আর গোঁড়ামির কারবারকে সমূলে বিনাশ করার সাহস দেখে তারা বিপদের ছায়া দেখেছেন। কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার ভয়ে তাই ফতোয়া। দাওয়াই গোটা গ্রামের থেকে একঘরে, আলাদা। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না। শুধু তাই নয়, গ্রামের কমিউনিটি বাথরুমে গোসল করাও নিষেধ তাদের। আর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও গ্রামের কেউ গেলে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
দেখে নিয়েছেন চার কন্যাও। বাবার শেষ ইচ্ছা পালনের তাগিদ হোক বা সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, পিছপা হতে রাজি নন কেউ।
বড় মেয়ে মিনা বলেছেন, ‘বাবার কাজ সেরে আসার পরই আমাদের ক্ষমা চাইতে বলে মোড়লরা। কিন্তু আমরা ক্ষমা চাইনি। কারণ আমরা কোনও অন্যায় করিনি। কোনও অপরাধ করিনি।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এসআই)