একুশে আগস্টের মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: পিন্টু

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৮, ২০:০১
ফাইল ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় গোপালগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী থাকায় সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে এই মামলায় জড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু।

মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে এই মামলায় অস্থায়ী ট্রাইব্যুনালে যুক্তি উপস্থাপনের শুনানিতে পিন্টু এই দাবি করেন।

এর আগে মঙ্গলবার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এই আসামির পক্ষে বেলা ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন। যুক্তিতে তার মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করে বেকসুর খালাস প্রার্থনা করেন। তিনি এদিন এই আসামির পক্ষে ৬ষ্ঠ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করে তা শেষ করেন।

আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার পর তার মক্কেল আব্দুস সালাম পিন্টু নিজে কিছু বলতে চান জানিয়ে তাকে বলতে দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন।

ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন অনুমতি দিলে বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে আসামি আব্দুস সালাম পিন্টু তার বক্তব্য শুরু করেন।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাদের বেহেশত নসিব করুন। মাননীয় আদালত, এই মামলার বক্তব্যে আসার আগে একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিহত হয়েছিলেন তারই কাছের লোকদের দ্বারা। তিনি মারা যাওয়ার পর বেনিফিসিয়ারি হয়েছেন তারই বন্ধু মোস্তাক। মোস্তাক সরকারের অধীনে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিল তারই বন্ধুরা।’

‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও তার কাছে সোনা সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। তিনিও মারা যাওয়ার পর বেনিফিসিয়ারি হয়েছিলেন তারই কাছের লোকেরা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা নিহত হলে এর বেনিফিসিয়ারি হতেন তারই কাছের লোকেরা।’

পিন্টু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আমি হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। আমিও চাই এই মামলার বিচার হোক। তবে তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হতে হবে। মামলাটিতে সঠিক তদন্ত হয়নি। ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটন হয়নি। ঘটনা রহস্যের বৃত্তেই রয়ে গেছে। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতে আমাকে অন্যায়ভাবে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

সাবেক এই উপমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করে আমার ব্যাংক হিসাবে ২১ লাখ টাকা পায়। ঢাকা শহরে আমার কোনো বাড়ি গাড়ি না পেয়ে ও দুর্নীতির কোনো তথ্য না পেয়ে অবশেষে আমাকে ছেড়ে দেয়। এর এক বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুইটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নামে তখনই এই দুইটি দলকে বিবাদে ঠেলে দিতে মুফতি হান্নানকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি করিয়ে আমাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করায়। কারণ ২১ আগস্ট ঘটনার সময় আমি গোপালগঞ্জের দায়িত্বে ছিলাম। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির প্রত্যেকটি কথা যে মিথ্যা তা আমি কাগজ দিয়ে প্রমাণ করব।’

আসামি পিন্টু বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করার পর রিমান্ডে নিলে বুঝতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির আমার বিরুদ্ধে কিছু না পেলেও আমাকে আসামি করার জন্য তাকে জোর করা হয়। তিনি করতে না চাইলে তাকে এ মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা হয়। তখন ফজলুল কবির তাদের সঙ্গে আপস করে আমাকে চার্জশিটে আসামি করে চাকরি রক্ষা করেন। এই কারণেই আমি ফজলুল কবিরকে জেরা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি (বিচারক) অনুমতি দেননি। আমি আজ (গতকাল) আর কিছু বলব না, কাল (বুধবার) বলব।’

এরপর বিচারক এই আসামির অবশিষ্ট বক্তব্য প্রদানের দিন বুধবার ধার্য করে যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করেন।

প্রসঙ্গত, মামলাটিতে ওই আসামির পর শুধু সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলে আসামি পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হবে। এরপরই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন।

এ মামলার প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল জানান, মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। ১৮ জন পলাতক। আসামিদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ হবে। ইতোমধ্যে ৪৩ জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে ৪৪তম জনের পক্ষে চলমান রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটিতে ২৫ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপনের পর গত ১ জানুয়ারি তা শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার সাত বছর কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর সোমবার পর্যন্ত আসামি পক্ষ ৭৮টি ধার্য তারিখ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিত নেতাকর্মী। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/আরজেড/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা: আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :