জোটে থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে আগেও লড়েছে জামায়াত

ওয়াসেক বিল্লাহ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:০২ | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০১৮, ০৮:০৯
সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বিপরীতে জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি তুমুল আলোচিত বটে, তবে সেটাকে অভিনব বলার সুযোগ নেই। কারণ এই ঘটনাটি এর আগেও নানা সময় ঘটেছে।

জোটবদ্ধ হয়েও দুটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি চ্যালেঞ্জ করে মোট সাতটি আসনে লড়াই করে জামায়াত। এর মধ্যে কেবল একটিতে জিততে পারে তারা। ২০০১ সালে এমন তিনটি আসনের মধ্যে একটিতে জামায়াত জিতে আর দুটিতে দ্বিতীয় হয়।

কিন্তু ২০০৮ সালের এমন চারটি আসনের মধ্যে একটিতে জামায়াত দ্বিতীয় হলেও বাকি তিনটিতে হয় তৃতীয়। আর এই চারটি আসনেই তখন জিতে যায় আওয়ামী লীগ।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জোটের বাইরে থেকে গোপন সমঝোতার পর ১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি, আজিজুল হকের কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় জামায়াত। এরপর থেকে দুটি জাতীয় নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করেছ বিএনপি-জামায়াত। যে নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে, সেটি বর্জন করেছে জামায়াতও।

১৯ বছর ধরে অটুট এই জোটে সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিলেটে বিএনপির প্রার্থী থাকার পরও জামায়াত তার দলের নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক ফাটলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু নির্বাচনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াত একাধিক আসলে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ২৯৭ আসনে সমঝোতা হলেও তিনটি আসনে দুই দলেরই প্রার্থী রয়ে যায়।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সেখানে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী এবং বিএনপির অলি আহমদে লড়েন ধানের শীষ প্রতীকে। জয় পায় জামায়াত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ তখন বিএনপির শাহজাহান মিয়া জেতেন কিন্তু তার সঙ্গে লড়াই করেন জামায়াতের নজরুল ইসলাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে সে সময় বিএনপি নেতা হারুণ অর রশীদ জেতেন ধানের শীষ প্রতীকে, কিন্তু দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জামায়াতের লতিফুর রহমান লড়াই করেন, যদিও তিনি হেরে যান।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে ৩৫টি আসনে ছাড় দেয় বিএনপি। কিন্তু দলটি ছাড় না পেয়ে আরও চারটি আসনে প্রার্থী দাঁড় করে। আবার জামায়াতকে দেয়া ছাড় মেনে নিতে না পেরে বিএনপির সাবেক এক মন্ত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করেন ফরিদপুরের একটি আসনে।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে আগের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির আকবর আলীকে না মেনে প্রার্থী হন জামায়াতের রফিকুল ইসলাম খান। সেখানে জেতেন আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম।

রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপি কবির হোসেনকে মনোনয়ন দিলেও জামায়াত সেখানে দাঁড় করায় আতাউর রহমানকে। আর দুই দলের ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পায় আওয়ামী লীগ। জিতে যান নৌকা প্রতীকের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনেও জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকে কোনো আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়নি জামায়াত। সাবেক সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদকে আগের নির্বাচনের মতোই চ্যালেঞ্জ করেন জামায়াতের লতিফুর রহমান। আর ত্রিমুখী লড়াইয়ে ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো জয় পায় আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হন আবদুল অদুদ।

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় শামসউদ্দিন আহমেদকে। কিন্তু জামায়াত সেটা মানতে রাজি ছিল না। জসিমউদ্দিনকে দাঁড় করায় তারা। কিন্তু জিততে পারেননি কেউ। জিতে যান আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন।

মুজাহিদকে বিএনপি নেতার চ্যালেঞ্জ

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রভাবশালী হয়ে উঠা মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে জোটের মনোনয়ন দিতে গিয়ে দলের সাবেক এক মন্ত্রীকে বাদ দেয় বিএনপি।

নূন্যতম জনভিত্তি না থাকলেও ফরিদপুর-৩ আসনে জোটের মনোনয়ন পান মৃত্যুদণ্ড হওয়া জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। কিন্তু তাকে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। কলস প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়ান তিনি।

জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তখন ফরিদপুর সফরে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মুজাহিদকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় খুনি বাহিনীর কমান্ডারকে সমর্থন জানাতে রাজি হয়নি বিএনপির একটি বড় অংশ। তারা ছিলেন কামাল ইবনে ইউসুফের সঙ্গে।

ওই ভোটে ফরিদপুর সদর আসন থেকে জেতেন বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর অল্পের জন্য জামানত রক্ষা করতে পারা মুজাহিদ তৃতীয় হন।

ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা