নন্দীগ্রামে হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা কৃষক

প্রতীক ওমর, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৭

নাগর নদের পানি বৃদ্ধি এবং বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের দুইপাশে খাস নালা ও খাল ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে বগুড়ার নন্দীগ্রামে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের প্রায় হাজার খানেক পরিবার। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নাগর নদ এখন পানিতে ভরে গেছে। নদের কিনারা দিয়ে পানি বিভিন্ন পয়েন্টের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ও থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানির নিচে ডুবে গেছে আমনের ক্ষেত এবং বীজতলা।

কৃষি অফিস বলছে, বন্যায় এই উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমির আমনের চারা পানির নিচে তলে গেছে। কিন্ত সেই পরিসংখ্যান কৃষকের কাছে কয়েকগুণ বেশি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নাগর নদ দিয়ে ও দৈয়নার খাল ধসে ফসলের মাঠ ও বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলার নামুইট, কাথম, চাকলমা, বাদলাশন, কৈগাড়ী, দামগাড়া, নিজামদকুড়ি, ঢাকইর, দমদমা, চাতরাগাড়ি, নাগরকান্দি, কালিয়াগাড়ী, রুস্তমপুর, মূলকুড়িসহ বিভিন্ন মাঠের আমন ধান এবং বীজতলা ডুবে গেছে। দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুটি ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মাঠের বিভিন্ন ফসল, শতাধিক পুকুরসহ আঞ্চলিক সড়কগুলো ডুবে গেছে।

এলাকার চারদিকে এখন পানি থৈ থৈ করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার খানেক পরিবার। এছাড়া ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকন্দি থেকে বৃষ্ণপুর, কালিয়াগাড়ী থেকে চাতরাগাড়ী, উমাপতিদীঘি, পার-নাগরকান্দি রাস্তা ডুবে গেছে, বাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, পানির নিচে আমন ধান, সবজির ক্ষেত, বীজতলা।

এদিকে ভাটগ্রাম ও বুড়ইল ইউনিয়নের ফসলের মাঠ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অাষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি। একারণে অনেক কৃষক সেচপাম্প চালু করে ক্ষেতে আমনের চারা রোপণ করেন। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশে আমনের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। কিন্তু চারা রোপনের পর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার মাঠঘাট থৈ থৈ। ডুবে গেছে আমনের চারা ও বীজতলা। এছাড়াও এই বন্যায় পানিবন্দি মানুষ তাদের গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন।

সাধারণত নন্দ্রীগ্রামের এইসব এলাকায় বন্যার পানি সহজে প্রবেশ করে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই বন্যার অন্যতম কারণ বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের দুইপাশে নালা ও খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে কিছু চিহ্নিত মানুষ। প্রশাসনের চোখের সামনে এসব নালা দখল করে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হলেও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে বৃষ্টির পানিতেই এই অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং সেই বন্যায় প্রান্তিক কৃষকরাই বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মাছুম বলেন, এই ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা এখন পানিতে ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পনির নিচে আমন ধান ও বীজতলা। প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি।

দমদমা গ্রামের পানিবন্দি নাসরিন বেগম, মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অনেকে জানান, এখন বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের কেউ কোন খোঁজখবর নেয় না। পানি বের হওয়ার নালাগুলো প্রভাবশালীরা ভরাট করে বিল্ডিং করেছে। তাদের কারণেই এখন ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়িতে পানি ওঠে। ফসলের মাঠ তলে যায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মুহা. মশিদুল হক জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে উপজেলায় জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমির আমন চারা তলিয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিতে এটি বন্যা নয়। তেমন ক্ষতির হবে না বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :