একটি কেন্দ্রেও জিততে পারেননি বুলবুল

রিমন রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ আগস্ট ২০১৮, ১০:২৬ | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০১৮, ০৮:১১

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে একটি অভিনব বিষয় উঠে এসেছে। যে ১৩৮টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে তার একটিতেও ধানের শীষ নৌকার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। অর্থাৎ প্রতিটি কেন্দ্রেই বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের চেয়ে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে বেশি ভোট পড়েছে।

গত সোমবারের ভোটে বুলবুলের দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন লিটন। নৌকা মার্কায় লিটন যেখানে পেয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪ ভোট, সেখানে বুলবুলের পক্ষে ধানের শীষে পড়েছে ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। অর্থাৎ দুই পক্ষের ব্যবধান ছিল ৮৮ হাজারের বেশি।

সোমবার তিন মহানগরে হওয়া ভোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রাজশাহীতে। বরাবর ভোটদানের হার বেশি থাকা এই নগরে এবার ভোট পড়েছে ৭৮.৬৬ শতাংশ। আর এই ভোট ভোটাররা দিয়েছে মোট ১৩৮টি কেন্দ্রে।

নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘেঁটে দেখা যায়, যতগুলো কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তার একটিতেও লিটনের সঙ্গে পেরে উঠেননি বুলবুল। এর মধ্যে ব্যালটে নেয়া ভোটের তুলনায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটের পার্থক্য ছিল আরও বেশি।

ব্যালটে নেয়া ভোটে পার্থক্য দ্বিগুণের কিছু বেশি হলেও ইভিএমের ভোট হয়েছে এমন দুই কেন্দ্রে এই পার্থক্য তিন গুণ। এই দুই কেন্দ্রে নৌকায় পড়েছে এক হাজার ২৪ ভোট, আর ধানের শীষে ৪৮৯ ভোট।

এই নির্বাচনে দৃশ্যত কোনো গোলযোগ হয়নি। বুলবুল অবশ্য অভিযোগ করেছেন ভোট ডাকাতি হয়েছে। সিল মারা হয়েছে আগের রাতেই। এই অভিযোগ করে তিনি নিজে ভোট দেননি আর একটি কেন্দ্রে গিয়ে তিনি অবস্থান ধর্মঘট করেছেন বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে প্রায় সব ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে।

ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে ভোট ছিল দুই হাজার ২৪৮টি। বেলা সাড়ে ১১টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে লিটন অভিযোগ করেন একশ ভোট বাদে সব ভোট দেয়া হয়ে গেছে। অথচ এর পওে ভোট হয়েছে আরও সাড়ে চার ঘণ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়েছে এক হাজার ৯৫১টি।

হার স্বীকার করতে নারাজ বুলবুল

বুলবুলের দাবি করছেন, রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে তিনি হারতেই পারেন না। আওয়ামী লীগপন্থী নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুলবুল বলেন, ‘ভোটে ভোটারের মতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এ জন্য গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাতে ভোটে কারচুপির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ এই অভিযোগকে পরাজিত প্রার্থীর মর্মবেদনা আর অযুহাত হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, বুলবুলের পাঁচ বছরে উন্নয়ন বঞ্চনা আর তার আগের পাঁচ বছরে লিটনের সঙ্গে তুলনা করেছে রাজশাহীবাসী। আর এ কারণে এই ফল।

বুলবুল ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যকে হত্যাসহ নানা অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়। ওই সময় তিনি আত্মগোপনে থাকেন। পরে ধরা দিয়ে কারাগারে যান। আর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত হন একাধিকবার। সব মিলিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ২৬ মাস।

কিন্তু এই সময়ের মধ্যে উল্লেখ করার মতো কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি বুলবুল। বরং লিটনের হাতে গড়া পদ্মপাড়ের সুন্দর এই শহর যানজট, ধুলোবালি আর আবর্জনার শহরে পরিণত হয় তার আমলেই। নাগরিক সেবাও গিয়ে ঠেকে তলানিতে।

এবার বুলবুলের ইশতেহারেও তার উন্নয়নের তেমন বার্তা ছিল না। বরং সেখানে জায়গা পায় জাতীয় নানা ইস্যু। আবার সিটি করপোরেশনের বৃদ্ধি করা অস্বাভাবিক হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর আশ্বাস দিয়েও তিনি কমাননি। এসব বিষয়গুলো ভালোভাবে নেননি নগরবাসী। ফলে প্রভাব পড়েছে ভোটে।

এছাড়া বুলবুল গত নির্বাচনে জামায়াতকে পাশে পেলেও এবার পাননি। জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী তার পক্ষে প্রচারে নামেননি। নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীই এবার তার পক্ষে কাজ করেনি।

তাছাড়া নির্বাচনের প্রচারের সময় ভোটারদের সহমর্মিতা পেতে নিজেদের পথসভায় হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। এসব কারণে ভোটারদের পছন্দের বাইরে চলে যান বুলবুল।

আ.লীগ যা বলছে

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘খায়রুজ্জামান লিটন প্রথমবার মেয়র হয়েই নগরীতে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেন। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে শাপলা চত্বর ইস্যুতে জামায়াত-বিএনপির অপপ্রচারের কারণে তিনি হেরে যান। কিন্তু মানুষ পরে তাদের ভুল বুঝতে পারে। আর এ জন্যই এবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন তিনি।’

ডাবলু সরকার বলেন, ‘নব-নির্বাচিত মেয়রের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কিছু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি আছে। রয়েছে কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়নের ঘোষণাও। তাই তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে নগরীর সর্বস্তরের মানুষ এবার নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটনকে সমর্থন দিয়েছিলেন।’

‘আমি আমার জীবনেও একজন প্রার্থীর পক্ষে এমন গণজোয়ার দেখিনি। ভোটের আগে যিনি আমাকে চেনেন না, এমন সাধারণ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছি- কে জিতবে? একবাক্যে তারা বলেছে নৌকা।’

জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবার ‘চলে বদলে দেই রাজশাহী’ স্লোগানে সিটি নির্বাচনের প্রচারে নামেন। স্লোগানটি ভোটারদের মাঝে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা