বামরা শ্রমিক স্বার্থের কথা বলছে না কেন?

মুজতবা হাকিম প্লাটো
| আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৫৩ | প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১০:২৩

খোয়াব এক মারাত্মক জিনিস। আপনাকে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনটা এক আদর্শ সড়ক ব্যবস্থার স্বপ্ন আমাদের দেখাচ্ছে। এক মন্ত্রীর কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে আন্দোলনটা সরকারবিরোধী চেহারা পেয়েছে। অথচ আন্দোলনের ফলে যা ঘটবে সেটা তাদের বিরুদ্ধ নয়।

আগেই বলি, সব ধরনের বাম দল এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। ন্যূনতম শ্রমিক স্বার্থের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নাই। সবাই বলছে ‘রাজা ন্যাংটো কেন’, কিন্তু আমার চোখে ধরা পড়ছে ‘বামের কাপড় কোথায়?’।

যদিও সিপিবি ছাড়া আর কোন দলের পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সামান্যতম ভিত্তি নাই। তবু দু-দিন পর এরা সবাই শ্রমিক দরদী হয়ে মাঠে নামবে।

সংক্ষেপে বলি নতুন আইনে অযোগ্য সব যান বাতিল। মানে বোঝেন? শুধু ঢাকার বাস না সারা দেশের যত যানবাহন এর আওতায়। নসিমন, করিমন সব ইনফরমাল যানবাহনও। ওসব যারা চালায় তারা কথিত যোগ্য চালকও নন। মানে তাদের ভাত মারা গেল। এইট পাসের নিচে কোন চালক, ফাইভ পাসের নিচে কোনো হেলপার থাকবে না। তো ভাই বোনেরা চোখটা বুঁজে এবার বাস্তব চিত্রটা কল্পনা করুন দেখি।

‘ওমা! আপনারা শ্রমিক শ্রেণির লোক বুঝি!’

এই আন্দোলনটা মার্কিন মুলুকের পরিচিত ‘শক থিওরি’ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করবে না। এই ঘাটতি পূরণে বড় পুঁজি জায়গা নেবেই নেবে। হ্যাঁ, সুন্দর কিছু গাড়ি আমরা দেখব বটে। ভাড়াও একটু চড়া হবে- সমস্যা নাই মধ্য আয়ের দেশ না? কারা যেন দেখলাম পরিবহন খাত মাফিয়া ব্যবসায়ী মুক্ত করতে এই আন্দোলনে নেমেছে। মারহাবা। হচ্ছে তো?

সড়ক দুর্ঘটনা মাত্রই তাকে হত্যা আখ্যা দিয়ে ফাঁসির দাবিতে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত নামবে সেটা স্বাভাবিক। তারা শ্রমিকের মজুরের জান কবজ করে হলেও শুধু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইবেই। এতে যে পেশা হিসেবে চালকদের ঝুঁকি কত মারাত্মক আকার নিচ্ছে সেটা ধরার বিষয় নয়। ছোটলোকের আবার জীবন।

শুনেছি উত্তরবঙ্গে ১০ লাখ লোক গ্রামীণ নসিমন জাতীয় যানবাহন চালানোয় যুক্ত। এবার হিসেব করুন কত মানুষের পেটে ও প্রাণে আপনারা হাত দিতে যাচ্ছেন। আর আরও বড় পুঁজির দৌরাত্মকে- ‘এসো হে এসো হে’ বলে স্বাগত জানাচ্ছেন। এই হচ্ছে আপনাদের ‘ক্রিমিনাল’ পরিবহন শ্রমিকদের শায়েস্তা করার আন্দোলনের মোদ্দা কথা।

তবে খোয়াব খোয়াবই। বাংলাদেশ যে অর্ডারে চলছে তা থেকে কিন্তু এক চুল নড়ছে না আপাতত।

ও আরেকটা কথা, এরপর শ্রমিক পাড়ায় কখনো বাম মারাতে গেলে শুনতে না হয়- ‘বাম কিসের … (যে স্লোগান দিচ্ছে পুলিশের নামে)।’

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :