বাণিজ্যে স্থবিরতা, আন্দোলন স্থগিত চায় এফবিসিসিআই

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০১৮, ২০:১১ | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০১৮, ২১:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এক সপ্তাহ ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়া এই আন্দোলন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানায়। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এফবিসিসিআই সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে চলছে পরিবহন ধর্মঘটও। এই কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। একই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবারহ বিঘ্নিত হওয়ায় আবারও মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন,  ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা প্রথম থেকেই নৈতিকভাবে সমর্থন করে আসছি। আন্দোলনের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে সমর্থন দিয়ে সরকার ছাত্রদের সমস্ত দাবি সুরাহা করার জন্য সম্ভাব্য বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নসহ আরও কঠোরভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

শফিউল ইসলাম  বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এ আন্দোলন থেকে উদ্ভূত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ও পরিবহনকে ব্যাহত করে এমন কোনো ধরনের ধর্মঘট বা আন্দোলনকে সমর্থন করিনি এবং আগামীতেও করবো না। বিশেষ করে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার যানবাহন ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সহিংসতা ঘটেছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স প্রবাহ মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে বর্তমান আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতার বিষয়কে বিবেচনায় রেখে যেকোনো কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে এফবিসিসিআই মনে করে।’

‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখা, রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্নভাবে উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিয়েছি। এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ধর্মঘট বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

‘বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন এবং পরিবহন ধর্মঘটের ফলে যানচলাচল বন্ধ থাকার কারণে সব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বৃদ্ধি পাওয়ার  আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে

চলমান আন্দোলনে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য সব বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে এফবিসিসিই সভাপতি বলেন, ‘এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’

আন্দোলনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এ ধরনের আন্দোলনে দুই ধরনের ক্ষতি হয়। আর্থিক ও সুনামের ক্ষতি। তাজরীনের জন্য সুনামের যে ক্ষতি হয়েছিল, বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। সাধারণত হরতালে প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ধরনের আন্দোলনে তো কিছু যানবাহন চলেছে, আবার কিছু চলেনি।’ সংগঠনের পক্ষে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবহন খাতের নেতাদের সঙ্গে বসতে পারেন বলেও জানান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি ফিটনেসবিহীন গাড়ি দেশে থাকা উচিত নয়।

দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন হলে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকবেই

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন ও কনসার্ন। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সবার মনে দাগ কেটেছে। সরকারও দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তখন এতে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকবেই।

এফবিসিসিআই সভাপতি অভিযোগ করেন, একটি মহল এখন ভুয়া খবর ছড়ানোর চেষ্টা করছে। গতকাল আমরা যা দেখেছি। তাই সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আমরা যেন এ ধরনের ফেক নিউজে বিভ্রান্ত না হই।

শফিউল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ঐকান্তিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত পরিকাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সম্ভাবনাময় দেশের উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে এবং তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার এবং বেসরকারি খাত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এ অবস্থায় চলমান আন্দোলন দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনার ফলে জাপান ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর থেকে বের হওয়ার চেষ্টার মধ্যে এধরনের আন্দোলন কিছুতেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। অপরদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যার প্রভাবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

অদক্ষ চালকের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে

শফিউল ইসলাম বলেন, মূলত অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং অদক্ষ চালকের মাধ্যমে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা তৈরি পোশাক খাতকে সম্পূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। শ্রম আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে তৈরি পোশাক খাতের মতো পরিবহনসহ অন্যান্য সব খাতেও শিশুশ্রমের ব্যবহার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

এফবিসিসিআর সভাপতি বলেন, জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণার্থে এবং জাতীয় উন্নয়নে যেকোনো বিষয়কে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানই সর্বোত্তম উপায় বলে ব্যবসায়ী সমাজ মনে করে। এই বাস্তবতায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিদ্যমান আন্দোলন কর্মসূচি থেকে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফেরার জন্য এবংপরিবহন শ্রমিকসহ অন্যান্যদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। 

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআর সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি  মুনতাকিম আশরাফ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআইয়ের বিভিন্ন সদস্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/জেআর/জেবি)