মেঘনার বাঁধে ফের ধস, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর
| আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:১০ | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৮

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১৫ দিনের মাথায় আবারো মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এনিয়ে গত এক বছরে সাতবার বাঁধে ধস নামল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কমলনগর মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন তীর রক্ষা বাঁধের উত্তর পাশের ৫০ মিটার ধস দেখা দেয়। আবারো ধস দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

এর আগে ১৫ জুলাই ভোররাতে ওই বাঁধের দক্ষিণাংশের প্রায় দুইশ মিটারে ধস নামে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনে বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধস নামে।

বাঁধ রক্ষায় নিম্নমানের কাজ করায় বার-বার বাঁধে ধস নামছে বলে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ করে আসছেন। হুমকির মুখে রয়েছে পুরো বাঁধ। বাঁধে ধস দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছে কমলনগর উপজেলার দু-লক্ষাধিক মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন র্বোড ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় ৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। কাজ করেন ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক লিমিটেড (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি না করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে তখন কাজ করায়। শুরুতে নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে জানা যায়, তীব্র স্রোতে এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দুইপাশে ব্লক ধসে পড়ছে। এতে করে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে কিছু এলাকায়। এছাড়া ব্লক থেকে ব্লকের দুরত্ব বাড়ায় বাঁধের বেশ কিছু অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। ধস ঠেকাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগ দিয়ে (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছে। তবে কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছেনা বাঁধ। এখন পুরো বাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে। এছাড়া গত এক মাস ধরে কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরনগর, লুধূয়া, সাহেবেরহাট, কাদিরপন্ডিতের হাট, পাটওয়ারীহাট, চরকালকিনি ও চরফলকনসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এ কারণে গত এক বছর বাঁধে পাঁচবার ধস নামে। এছাড়া অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি কেটে করে বাঁধ নির্মাণ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে।

এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেয়ায় আতঙ্কে রয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুইপাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্যদিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনর) সংসদ সদস্য- মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলছেন, রামগতি ও কমলনগর এলাকার নদী ভাঙা রোধ করা সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি, আমি এই দাবি পূরণের সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়েছে। প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ম পর্যায়ের সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা জন্য ১হাজার ৭০৮ কাটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।

এছাড়া কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় ৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :