বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৪১

শেখ আদনান ফাহাদ

বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে । এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে না বুঝে পা দিচ্ছে দেশের একশ্রেণির যুবক-কিশোর আর তাদের বাবা-মা। সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ‘কোমলমতি’ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বনাশ করতে উঠে-পড়ে নেমেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অন্ধকারের চক্র। কলেজ-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জামাতের ছাত্রসংগঠন শিবির, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলসহ কয়েকটি উগ্রপন্থী সংগঠন। শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে ব্যাগের ভেতর চাপাতি, দা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে এরা। আর অপরিণামদর্শী শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দিনের পর দিন অবস্থান করতে উস্কানি দিচ্ছেন প্রগতিশীল বলে পরিচিত কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ ।

নিরাপদ সড়কের দাবি সবার। ঢাকার রাস্তায় যখন বাসের চালকের নিষ্ঠুরতায় শিক্ষার্থীর প্রাণ গেল, তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। শ্রমিক নেতা, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান যখন মৃত্যুসংবাদ শুনে হেসে দিলেন , তখন আমরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েছি। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন রাস্তায় নেমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে চেয়েছে, আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য মেনে নেয়া যায় না।

বড়দের অন্যায় ছোটরা শুধরে দিবে, বাচ্চাদের কাঁধে ভর করে সমাজে বিপ্লব ঘটে যাবে, এমনটা ভেবে অনেকেই আরাম কেদারায় বসে ইন্টারনেট-মাধ্যমে বাচ্চাদের উস্কানি দিয়ে চলেছেন। অথচ নিজের সন্তানকে ঘরের বাইরে যেতে দিচ্ছেন না। পরের সন্তানকে রাস্তাঘাটে পাঠাতে জ্বালাময়ী পোস্ট দিচ্ছেন ফেসবুকে। বাচ্চারা যখন নিজেদের দায়িত্ব পালন আপাতত শেষ করে বাসায় ফিরে গেছে, তখন শুরু হয়েছে গুজব ছড়ানো।

আওয়ামী লীগ অফিস আর বিজিবি সদর দপ্তরকে সামনে রেখে একের পর এক হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে । এমনকি আওয়ামী লীগ অফিসে মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে, মেরে ফেলা হয়েছে বলে ভয়াবহ গুজব ছড়িয়ে  আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। প্রথম কয়েক দিন পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ থেকে বাচ্চাদের পূর্ণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। নৈরাজ্য শুরু হলে পুলিশ অ্যাকশনে গেছে। পার্টি অফিস হামলা হলে, স্বাভাবিক কারণে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মাঠে নেমে প্রতিহত করতে চেয়েছে।

অনেকে শুধু ছাত্রলীগের দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অথচ ‘কোমলমতি’ ছাত্রদের সাথে যে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া স্কুল-কলেজের ইউনিফর্মধারীরা চাইনিজ কুড়াল, দা, চাপাতি নিয়ে হামলা করছে সেটি এই সুশীলদের নজরে পড়ছে না। সবাই যেন উন্মাদ হয়ে উঠেছে। নিজেদের দলীয় সংকীর্ণ উদ্দেশ্য পূরণে শুধু পুলিশ আর ছাত্রলীগকে ভিলেন বানাতে চাচ্ছেন ইনারা। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ  নিশ্চয় তার হুঁশ হারায়নি। মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির ফলে। সাধারণ মানুষের পেটে লাথি দিয়ে দিনের পর দিন রাস্তাঘাট অবরোধ করে রাখার পক্ষে আর দেশের বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন মানুষ নেই।

২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামাত যখন সারাদেশে পেট্রোল-বোমা সন্ত্রাস চালিয়েছে, তখনো মানুষ পুলিশের পাশাপাশি অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাস্তায় নেমেছে। অবরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশকে স্বাভাবিক করেছে।

বিডিআর বিদ্রোহ ছিল এমনই আরেক ষড়যন্ত্র। দেশের মানুষ সে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে উঠে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, দেশের মানুষের ইনকাম বেড়েছে, প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ, অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এর কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না এদের। এরা কোনো না কোনো ছুতায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন কামনা করছে। যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা নয়, অন্ধ বিরোধিতার দাস হয়ে এরা সরকার পতনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। চেষ্টায় না পেরে অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

দেশের ‘উচ্চশিক্ষিত’ কয়েকজন মানুষ পর্যন্ত বিরোধিতায় অন্ধ হয়ে গিয়ে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উস্কানি দিচ্ছে। এই উস্কানি শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশ থেকেও আসা শুরু হয়েছে। আবার বিদেশিদের স্থানীয় এজেন্টরা সক্রিয় হয়েছে। সদাসর্বদা বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা এই সুশীল শ্রেণির সাথে প্রকাশ্যে বৈঠক করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। একজন বিদেশি কূটনীতিক এভাবে সব জায়গায় চলে যেতে পারেন? মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। আকারে, ইঙ্গিতে বলা হচ্ছে, সরকারদলীয় যুবকরা নাকি এই হামলা করেছে। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এ ধরনের অভিযোগ অমূলক। এমন হামলা যে কোনো অন্ধকারের শক্তিও করে থাকতে পারে। ২০১২ সালে পেট্রল-বোমা সন্ত্রাস চলার সময় কারা তৎকালীন মার্কিন দূতাবাসের হামলা চালিয়েছিল ? জামাত তখন তাদের ওয়েবসাইটে অফিসিয়ালি মাফ চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। 

১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগেও আমরা জানি যে, তৎকালীন মার্কিন দূত খুব সক্রিয় ছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চেহারা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন ।

যুবক-কিশোরদের যে অংশটি নানা জঙ্গিবাদী তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে এরা পড়ালেখা করতে পারে। ওরা একটু তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখুক, কোন আমলে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে। বিসিএসকে কেন্দ্র করে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল। অথচ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একবারও বলছে না যে, গত ৯ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারই সবচেয়ে বেশি সরকারি-বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা করেছে। অনুন্নত রাষ্ট্রের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নাম উঠানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশব্যাপী চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নজির দেখতে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করার দরকার নেই। নিজের ঘরের বিদ্যুতের আলোর দিকে তাকালেই দেখা যাবে উন্নয়ন। ঘর থেকে বের হয়ে পাকা সড়ক-মহাসড়কে একটু ঘুরে আসলেও উন্নয়ন না চোখে পড়ার কথা না। ডিজিটাল জগতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সরকারের ডিজিটাল সেবার সুযোগ নিয়েই সরকারবিরোধীরা এখন গুজবের আশ্রয় নিয়ে নাশকতায় নেমেছে। যদিও সুস্থ, স্বাভাবিক লোকজন, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম নিজেদের ভাগ্য বদলের দারুণ সুযোগ পেয়ে খুব কাজে লাগাচ্ছে নানাবিধ ডিজিটাল সেবা।

দুর্নীতি পর্যন্ত কমাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিটি সূচকে উন্নয়নের গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী। যতটুকু পিছিয়ে আছি, যতটুকু বিশৃঙ্খলা, তার জন্যও দায়ী অন্ধকারের শক্তি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটলে আজকের বাংলাদেশের চেহারা হতো অন্যরকম। নিজের পায়ে কুড়াল মারার আগে দেশের মানুষকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের গভীরতা সম্পর্কে বুঝতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দোসরদের চিনতে হবে জনগণকে। যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের মানুষকে মানবাধিকার দিতে পারে না।

ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেনে লাখ লাখ মানুষ মেরেছে এই যুক্তরাষ্ট্রের খুনি বাহিনী। ১৯৭১ সালে আমাদের ৩০ লাখ মানুষ হত্যার জন্য অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা। এমন একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কোথায় কী করেন, কার সাথে বৈঠক করেন সবকিছু সম্পর্কে সরকার, দল ও জনগণ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সন্তানদের বুঝিয়ে ক্লাসে ও ঘরে ফিরিয়ে নিতে হবে। তবে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, সচল প্রশাসন। না হলে মানুষের মনের ক্ষোভ শেষ হবে না।

লেখক: সাংবাদিক