সরকার পতনের পাঁয়তারা ছিল বিএনপির: দোলন

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০১৮, ২১:৫০ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০১৮, ২২:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে গিয়ে বিএনপি সরকার পতনের পাঁয়তারা করেছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহসভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান দোলন। তবে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে এই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।  

বুধবার সন্ধ্যায় নাগরিক টেলিভিশনের ‘বলা না বলা’ নামের টক শোতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সিনিয়র সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্য দুই প্যানেল আলোচক ছিলেন লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।   

শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক ‘এই সময়’ সম্পাদক বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খুবই ভালো একটি ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছিল। কিন্তু এর ভেতরে ঢুকে বিএনপি সরকার পতনের পাঁয়তারা করে। তারা সরকারের পতন ঘটাতে চাইবেন আর সরকার বসে বসে আঙুল চুষবে সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে একপর্যায়ে শিবির ও ছাত্রদল ঢুকে যায় বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন কৃষক লীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীর বেশে এমন কিছু ছেলেমেয়েকে আমরা এই আন্দোলনে দেখেছি যারা আদৌ ছাত্র-ছাত্রী কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’

কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দোলন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন করছে এটা আমাদেরও দাবি। আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই।’ এ সময় তিনি নিজের সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। দুবার সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। একবার ঢাকায়, আরেকবার ফরিদপুরে।

ছাত্রদের আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে নিয়েও কথা হয় অনুষ্ঠানে। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিক দোলন বলেন, ‘পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে বলে তিনি (শহিদুল) অভিযোগ করেছেন। এটা কেউ সমর্থন করে না, আমিও ব্যক্তিগতভাবে সেটা সমর্থন করি না। তবে তিনি যে অভিযোগ করেছেন সেটাও প্রমাণ হওয়ার দাবি রাখে। আদালতের নির্দেশে আজ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তার স্বাস্থ্য ভালো আছে।’

তিনি (শহিদুল) আন্দোলন চলাকালে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করে দোলন বলেন, ‘তিনি সরকারকে দেশে-বিদেশে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এ জন্যই তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রসঙ্গে সম্পাদক দোলন বলেন, ‘আমি নিজেও এই ধারায় মামলা খেয়েছিলাম। তৎকালীন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আমার বিরুদ্ধ মামলা করেছিলেন।’

আওয়ামী লীগ কখনো বিরোধী দলে গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারা প্রয়োগ হতে পারে- উপস্থাপকের এমন আশঙ্কা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা দোলন বলেন, ‘আমিও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সব ধারার সঙ্গে একমত নই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাইলেই সবকিছু লেখা যায় না। সমালোচনা হতে পারে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো ঠিক নয়। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে এটা নিয়ে প্রশ্ন আসত না।’

এ সময় তিনি ছাত্রদের আন্দোলনের সময় অভিনেত্রী কাজী নওশাবার একটি ভিডিও লাইভের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ধানমন্ডিতে চারজনকে হত্যা, চারজনকে ধর্ষণ এবং একজনের চোখ উপড়ে ফেলার কথা ফেসবুক লাইভে প্রচার করেন ওই অভিনেত্রী। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মামলায় হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

ওই প্রসঙ্গ টেনে ঢাকাটাইমস সম্পাদক বলেন, ‘নওশাবা যে কাজটি করলেন এতে তো ম্যাসাকার হয়ে যেত। এটা কি দায়িত্বশীলতা!’

অনুষ্ঠান চলাকালে একজন দর্শক ফোন করে রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধির কবে উদয় হবে এ ব্যাপারে জানতে চান। এ প্রসঙ্গে উপস্থাপক এবং অপর দুই আলোচকের কথার প্রসঙ্গ টেনে দোলন বলেন, ‘আপনারা তিনজনই শুভবুদ্ধি উদয় হোক বলেছেন। কার শুভবুদ্ধি? শুধু আওয়ামী লীগের শুভবুদ্ধির উদয় হলেই হবে? সব দায়িত্ব কি শুধু আওয়ামী লীগের?’

এ সময় তিনি বিএনপির জোট সরকারের আমলের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সেই সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার গাড়ি ফেরিতে ওঠার পর পতাকাবাহী একটি গাড়ি দেখতে পান। পরে তোফায়েল একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, গাড়িটি ছিল সেই সময়ের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের; মানবতাবিরোধী অপরাধে পরবর্তী সময়ে যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।  

দোলন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ডালিমকে উৎসাহিত করেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃতও করেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে রাজাকার ও মানবতাবিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। সুতরাং তাদের আগে শুভবুদ্ধি উদয় হওয়া দরকার।

টঙ্গীর জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে দোলন বলেন, জনপ্রিয় এই নেতার খুনির ভাইকে বিএনপি গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে তাদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এস এম কিবরিয়া হত্যা এবং ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন কৃষক লীগের সহসভাপতি।

দোলন বলেন, ‘বিএনপি বিরোধী দলে থাকলে ভালো ভালো কথা বলে, কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে তা করে না।’ এ জন্য আগে বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হবে সেটাই প্রত্যাশা করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

(ঢাকাটাইমস/৮আগস্ট/জেবি/মোআ)