চুক্তিতে চলছে বাস, কথা রাখেননি মালিকরা

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০১৮, ২০:৪৬ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪৮

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

চুক্তির বদলে দৈনিক বেতনে বাস চালানোর ঘোষণা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও চুক্তিতে চলছে নগর পরিবহনে বাসের একটি বড় অংশ।

বৃহস্পতিবার থেকেই সব বাস চুক্তির বদলে চালক-শ্রমিকদের বেতনে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল পরিবহন মালিকদের সমিতি। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে, যেসব বাস সিটিং হিসেবে চলছে, কেবল সেগুলোর চালক-শ্রমিকরা ট্রিপ হিসেবে টাকা পাচ্ছেন।

আর যেসব বাস লোকাল হিসেবে চলছে, সেগুলো আগের মতোই মালিককে নির্ধারিত টাকা দিয়ে মালিকের কাছ থেকে বাস ভাড়া নিয়েছে চালক শ্রমিকরা।

মোহাম্মদপুর থেকে আজিমপুর পর্যন্ত চলা ১৩ নম্বর বাসের চালক আক্তার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমগো গাড়ি কন্ট্রাকে চলে। ৪২০০ টাকা দৈনিক মালিকরে দিতে হয়। বাকি রাস্তার সব খরচসহ পাঁচ হাজার টাকা পড়ে। তারপর যা থাকে আমার আর হেলপারের। ওবিলে ট্রিপ (সিটিং সার্ভিস) হিসাবে টাকা আমগো পোষাইব না। ডেইলি ৬-৭ ট্রিপের বেশি হয় না।'

রাজধানীতে বাসের পাল্লাপাল্লি আর যাত্রীর জন্য স্টপেজে স্টপেজে ডাকাডাকির অন্যতম কারণ এই চুক্তি। পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন একটি পরিমাণ টাকা দেয়ার শর্তে বাস নিয়ে বের হন চালক ও শ্রমিকরা। আর ওই টাকা তোলার পর বাকি টাকা তাদের পকেটে যায়। এ কারণে শ্রমিকরা চেষ্টা করে যত সম্ভব তত বেশি যাত্রী নেয়ার। আর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই প্রবণতাকে একটি মানসম্মত পরিবহন ব্যবস্থার জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখে আসছেন।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুইজন ছাত্র নিহতের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে নগর পরিবহনের নৈরাজ্যের বিষয়টিও সামনে আসে। আর বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়া হয় চুক্তির বদলে শ্রমিকদের নির্ধারিত বেতন দিয়ে বাস চলবে। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আগামীকাল থেকে কোনো গাড়ি চুক্তিভিত্তিক চলবে না। এভাবে চললে পারাপারি বেশি হয়, দুর্ঘটনা বাড়ে। আমরা এটা করতে দেবো না। যে কোম্পানি এটা মানবে না তার লাইসেন্স বাতিল করার জন্য আমরা সুপারিশ করব। আর আমাদের সমিতির আওতায় হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেব।’

কিন্তু তাদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত চলা মেশকাত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই ওবিলে (ওয়েবিল, যাতে যাত্রীর সংখ্যা লিখে দেন সুপারভাইজাররা) চলি। আমাদের তো পাল্টানোর মতো কিছু নাই৷ কিন্তু অনেক বাস আছে যারা আজও কন্ট্রাকেই আছে।'

যেসব বাস শ্রমিকদের ট্রিপ হিসেবে বেতনে দিচ্ছে তাতে চালকরা প্রতি ট্রিপে পাচ্ছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আর সহকারী পাচ্ছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

তবে এই বেতনে আবার খুশি নন পরিবহন শ্রমিকরা্। ভোরের আলো পরিবহনে চালকের সহকারী স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ট্রিপ তো আর চাইলেই বেশি মারা যায় না। রাস্তায় জাম থাকে। বেতনে হইলে আমগো লস।’

জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বাবুল শেখ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যদি কেউ নিয়ম না মানে, তাহলে আমরা গাড়িগুলো সাইড করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এদিকে মালিক সমিতির সিন্ধান্ত না মেনে আজও চুক্তিতে বাস দেয়ায় আজমেরী পরিবহন, সুপ্রভাত পরিবহন, স্কাই লাইন পরিবহন, ডিএমকে পরিবহন ও গাবতলী-সদরঘাট (সাত নম্বর রোড) পরিবহনের নিবন্ধন বাতিল করেছে সমিতি থেকে। এসব কোম্পানির প্রায় ৫০০ বাস ও মিনিবাস চলাচল করে।

খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, এসব কোম্পানি মালিকের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে চুক্তিতে চালাচ্ছে। এ জন্য সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাঁদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/কারই/ডব্লিউবি/জেবি)