সড়ক আইনে সাজা নিয়ে খুশি নন ফখরুল

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০৫ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া খসড়া সড়ক পরিবহন আইনে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আইন সড়ককে নিরাপদ করতে পারবে না।

শুক্রবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি নেতা। তবে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে কী চান, সেটি বলেননি তিনি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের মধ্যে গত সোমবার মন্ত্রিসভা সড়ক পরিবহন আইনের খড়সায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এর আগে ২০১৭ সালের মার্চে নীতিগত অনুমোদন দেয়া খসড়াটি আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।

সড়ক পরিবহন নিয়ে বর্তমান আইনটি যুগোপযোগী নয় বলে সরকার নতুন এই আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর দিন থেকে যে নয় দফা দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে তার প্রথমেই ছিল বেপরোয়া চালক ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য ফাঁসির বিধান করা।

তবে সড়ক আইনের খসড়ায় বেপরোয়া চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অসীম জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনে মৃত্যুদণ্ডের কথাও আছে, তবে যদি সেটা ইচ্ছাকৃত হত্যা প্রমাণ হয়। আর তদন্তে যদি এই বিষয়টি উঠে আসে, তবেই ৩০২ ধারায় মামলা হবে।

তবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান নিয়ে অসন্তুষ্ট ফখরুল বলেন, ‘সংশোধিত এই আইনে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না। কারণ, এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর স্পষ্ট দিক নির্দেশনা কিংবা কঠোর শাস্তির বিধান নেই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবাই জানেন যে শুধু চালকের অপরাধে দুর্ঘটনা ঘটে না। চালক নিয়োগে, গাড়ির ফিটনেস যথাযথ করা এবং চালকদের বেতন, ভাতা, অবসর শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব যে মালিকদের তাদের বিরুদ্ধে আইনে কার্যকর পদক্ষেপ তথা বিআরটিএ’র অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনের কোনো বিধান রাখেনি।’

‘দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলা হবে কি না, এটি নির্ধারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়নি।’

প্রস্তাবিত আইনে বিআরটিএর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনের কোনো বিধান রাখা হয়নি বলেও মনে করেন ফখরুল।

সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু চালককেন্দ্রীক নয়, যানবাহনের ত্রুটি, সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটি ও পথচারীদের অসতর্ক চলাচল-সবকিছুই দায়ী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা সেন্টার-এআরআইএর গবেষণা বলছে, সড়কে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে ৪২ শতাংশই নিহত হয় অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপারে।

প্রস্তাবিত সড়ক আইনে সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটির জন্য প্রকৌশলী, যানবাহনের ত্রুটির জন্য পরিবহন মালিককেও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, চালকদের নিয়োগপত্র থাকবে, ফলে লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালককে দিয়ে গাড়ি চালানো হলেও মালিক আসবে জবাবদিহিতার আওতায়।

এর বাইরে প্রতিবার ট্রাফিক আইন অমান্য করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বরাদ্দ দেয়া ১২টি পয়েন্টের বিপরীতে একটি করে পয়েন্ট কাটা, পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে লাইসেন্স বাতিল, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ চালকের লাইসেন্স স্থগিত করার মতো বিধান সংযোজন হয়েছে।

ফখরুলের দাবি, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইনের যে সংশোধনী অনুমোদন করেছে তা ইতোমধ্যেই পরিবহন মালিক সমিতি ছাড়া সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর আনা উচিত।’

ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এএকে/ডব্লিউবি