দুর্ঘটনায় কেবল চালক দায়ী নয়: ইলিয়াস কাঞ্চন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১২ | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৪০

দুই যুগ ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে যাওয়া চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল চালককে দায়ী করছেন না। তিনি বলেন, ‘এর জন্য মালিকদেরও দোষ আছে।’

বলেছেন, ‘দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সাথে মানুষগুলোকে উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা দিতে দেরি হয়, এজন্য অনেকের মৃত্যু হয়।’

বৃহস্পতিবার রাতে ডিবিসি নিউজের রাজকাহন অনুষ্ঠানে ‘সড়ক আইন কেমন হলো?’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান। বলেন, প্রস্তাবিত আইনের বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে। আর দুর্ঘটনা রোধ করতে কেবল আইন করলে হবে না।

অনুষ্ঠানে আরো অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘যেকোনো আইন করতে গেলে সেই আইনের একটা উদ্দেশ্য থাকতে হয়। কিন্তু নতুন আইনে সেটা উল্লেখ নেই।’

‘একটা চালক অন্যায় করল, তাকে জেল দেওয়া হলো বা জরিমানা করা হলো কিন্তু আরেকটা মানুষের তো ক্ষতি হয়ে গেল সে তো আর ফিরে আসল না।’

গত ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে বাস-মালিক ও পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পাস হওয়ার কথা বলা আছে। বেপরোয়া যান চালনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও ইচ্ছাকৃত হত্যার জন্য সর্ব্বোচ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আইনে প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সে ১২ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। প্রতি অপরাধের বিপরীতে পয়েন্ট কাটা হবে। মোটরসাইকেল চলাচলে সাধারণ অপরাধ হিসেবে ২৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চালকদের জন্য শুধু দুর্ঘটনা হয় এটা বলা ঠিক না। মালিকেরও দায় আছে। মালিকরাই তো একটা শিশুর হাতে গাড়ি দিচ্ছে।’

নতুন আইনে বেশ কিছু বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘১৬ লক্ষ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এদেরকে প্রশিক্ষিত করা এবং আনস্কিলড মানুষগুলোকে স্কিলড করা, তাতে যে দুর্ঘটনা কমবে সেই দায়িত্ব তো আইনের মধ্যে নিলেন না।’

‘আমরা চেয়েছিলাম সড়ক নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন সিনিয়র সচিব হেড থাকবেন। চালকরা কত ঘণ্টা কর্ম করবে সেটা দেখবে শ্রম মন্ত্রণালয়।’

‘সড়ক চলাচলকারী যানবাহনের নিরাপত্তা দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এছাড়া দুর্ঘটনা হলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় হাসপাতালে। সেজন্য স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সমন্বয় দপ্তর হবে। যেখান থেকে সব সমন্বয় হবে কিন্তু এই আইনের মধ্যে রাখা হয়নি। এটা হলে দুর্ঘটনা রোধ এবং যারা নিহত বা আহত হত সবার উপকারে আসত।’

‘একটা দুর্ঘটনার ঘটনার পর খুব বাজে অবস্থা থাকে একটি পরিবারের। সে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে? বলেছিলাম ৫০ কিলোমিটার পর পর একটা ট্রমা সেন্টার করার জন্য।’

‘ভাই (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা) থাকার সময় দুইটা হয়েছিল কিন্তু সেখানেও হয়ত কাজ হচ্ছে না। আমাদের এখানে যদি দুর্ঘটনায় ১০ জন আহত হয় তার মধ্যে রাস্তায় পড়ে আট জন মারা যায়। কারণ ওখানে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিতে দেরি হয়।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেলে সেখানে পাঁচ বছরের সাজা বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না। যারা আইনটা করলেন তারা কী মাথায় নিয়ে করলেন বুঝলাম না।’

‘এই যে নতুন আইন করা হলো এটা তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে। মানুষ ও ছাত্রদের আন্দোলনকে খুশি করেছে। এই আইনের প্রয়োগের কোন বিধানই এখানে রাখা হয়নি।’

‘অতি সম্প্রতি কয়েকটি মামলা হয়েছে আর সেগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছে। কিন্তু মানুষ এখনও এর ফলটি পায়নি। ৯২ সালে মন্টুর যে পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল সেটাও সে পায়নি।

ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/এসএস/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :