মানিকগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে সুভাষ সরকারের ‘স্বপ্ন’

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০১৮, ১০:৩১

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে

মাদকাসক্ত পথশিশু ও দুস্থ পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জে গড়ে তোলা  হয়েছে মাদকাসক্তি নিরাময়, পুর্নবাসন, তথ্য সহায়তা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্বপ্ন’। শুধু তাই নয়, মাদকাসক্ত যুবকেরা সুস্থ হয়ে আর যেন নেশায় আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেশাক্রান্তদের সুস্থ করে তাদের বিভিন্ন স্থানে চাকরিও দেয়া হচ্ছে। আর যিনি এই  কাজটি করছেন তিনি মানিকগঞ্জ পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য বাবু সুভাষ সরকার। তার এমন মহৎ কাজে খুশি মানিকগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ।

মানিকগঞ্জের মাদকাসক্ত পথশিশু ও দুস্থ পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া জরিনা কলেজ মৌড় এলাকায় সাত মাস আগে মাত্র চারজন নেশাক্রান্ত রোগী নিয়ে  গড়ে তোলা হয় ‘স্বপ্ন’। ধীরে ধীরে  এখানকার চিকিৎসা সেবার কথা জেলার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেলে বাড়তে থাকে নেশাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সাত মাসে স্বপ্ন সেন্টারে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।

‘স্বপ্ন’ মাদকাসক্তি নিরাময়, পুর্নবাসন, তথ্য সহায়তা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর তুহিনুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, গত সাত মাসে স্বপ্ন মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র ২৪ জন মাদকাসক্ত রোগী চিকিৎসা নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে। এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৮ জন মাদকাসক্তি রোগী।

তুহিনুর রহমান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মতো স্বপ্নে রয়েছে নারকোটিক্স এনোনিমাক্স (মাদক দ্রব্যের গোপনীয়তা) নিয়ে চিকিৎসা। আরও রয়েছে দেশি, বিদেশি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যারা স্বপ্ন সেন্টারে খণ্ডকালীন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন স্বপ্ন মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মাদকাসক্ত রোগীদের। এখানকার রোগীদের সপ্তাহে একবার তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। তার মতে সাত মাসের স্বপ্ন সেন্টারটি এখনো শিশু হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে যৌবন লাভ করবে।

স্বপ্নের ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলর চৌধুরী এ এম আবু যুবায়ের ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ যুবসমাজ কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ স্কুল কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ে। পারিবারিক কলহ, একাকিত্ব ও পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়াই নেশাক্রান্ত হচ্ছে বর্তমান যুবসমাজ। তার মতে, পরিবারের একটু সময় পারে বর্তমান যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে। 

এদিকে স্বপ্নে গিয়ে সেখানকার বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া মাদকাসক্ত রোগীরা সার্বক্ষণিক থাকেন সিসি ক্যামেরা ও রুটিনের আওতায়। এর মধ্যে রয়েছে মনিং প্রেয়ার, মেরিটেশন, মনিং মিটিং, এডিকশন ক্লাস, ক্যাপশট, টিভি বিনোদন ও খেলাধূলাসহ গ্রুপ মিটিং। আর যারা  চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে কীভাবে চলবেন তার রয়েছে নানা দিকনির্দেশনা।

এ বিষয়ে কথা হয় ‘স্বপ্নের’ চেয়ারম্যান বাবু সুভাষ সরকারের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, মাদক সেবন শুধু ধনীর সন্তানেরা করে না। দুস্থ পরিবারের সন্তান ও পথশিশুরা কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তারা সঠিক চিকিৎসা নিতে পারে না। তাদের জন্য স্বপ্ন নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সবসময় খোলা থাকবে।

সুভাষ সরকার বলেন, এই ব্যয় বহন করা খুব সহজ কাজ নয়, তবু তার গার্মেন্স ব্যবসা থেকে যে অর্থ আয় হচ্ছে তার সিংহভাগ অর্থ তিনি সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া মাদকাসক্ত যুবকদের পেছনে ব্যয় করছেন। তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা নয়, সেন্টারে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করে দেওয়া হচ্ছে।

সুভাষ বলেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স কম থাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাই নেশাক্রান্ত যুবকদের সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে দ্বিতীয় যুদ্ধ মনে করে এই কাজ তিনি আমৃত্যু করে যেতে চান।  যেসব পরিবারের সন্তানের মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়ছে সেসব পরিবারের লোকদের স্বপ্ন সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানান সুভাষ সরকার।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)