ঈদকে ঘিরে এখন ব্যস্ত শ্রীপুরের কামার পল্লী

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০১৮, ১৮:২৯

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামার পল্লীতে ঈদুল আজহা ঘিরে বেড়েছে কাজের ব্যস্ততা। দিনরাত কোরবানির পশু জবাই ও গোশত কাটার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত কামার শিল্পীদের দম ফেলার যেন ফুরসত আর নেই। কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন কামার পল্লীগুলোতে লোহার সাথে হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে।

ঈদ আসতে এখন রয়েছে হাতেগোনা কয়েকদিন আর ঈদের দিন চাহিদামত কসাই না পাওয়ায় দেশের সিংহভাগ পশু কোরবানিদাতা নিজেরাই নিজেদের পশু কোরবানির কাজটি করেন। তাই তাদের এ কাজের অন্যতম অনুষঙ্গ ধারালো ছুরি, বটি ও দা। সারাবছর খবর না থাকলেও প্রতিবছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এসব ধাতবযন্ত্রের জন্য যেতে হয় কামার পল্লীতে। আবার অনেকে এসব সরঞ্জামে শান দিতেও ভিড় করছেন কামার পল্লীতে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারে রয়েছে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি কামারের দোকান। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে মাস খানেক আগে থেকেই মৌসুমী বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও এলাকার মোড়ে মোড়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি সবাই এসব সরঞ্জাম চাপাতি, দা, বটি ও ছুরি কেনায় চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদামত মানসম্পন্ন ধাতব সরঞ্জামের নিয়মিত যোগান দিতে এখন রাত দিন সমান তালে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

শ্রীপুর বাজারে কামার হরিপদ ও কালি বাবুর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে তাদের হামার ও হাতুড়ি যেন থামছেই না। বাজারের আশপাশের লোকদের ভোর হচ্ছে কামারদের দক্ষ হাতের হামার-হাতুড়ির টুংটাং শব্দে যা চলে গভীর রাত অবদি।

তারা জানান, ব্যস্ততার ভিড়ে দোকানেই তাদের দিনরাত অতিবাহিত হচ্ছে। শেষ সময়ের ব্যস্ততায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ না থাকায় ঈদুল আজহাকেই টার্গেট করে তারা ব্যবসা করেন।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে চাপাতি, দা, বটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়াও লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহার ১৫ ইঞ্চি লম্বার একটি ছুরি ১২শ থেকে ১৫শ টাকা, নরমাল ৭শ থেকে ৮শ টাকা, ছোট পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা প্রতি কেজি ৬শ থেকে ৮শ টাকা দরে, বঁটি দেড়শ থেকে ৪শ, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে শুরু, চাপাতি ৮শ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

শ্রীপুরের কেওয়া বাজারে কর্মকারের দোকানে দেখা হয় মফিজউদ্দিনের সাথে তিনি জানান, কামারদের দোকানে কোন মূল্যতালিকা না থাকায় যে যার মত কাজের মুজুরি নিচ্ছে। প্রতিটি দোকানে নির্দ্দিষ্ট মূল্য তালিকা টাননোর দাবি তার।

মাওনা চৌরাস্তার প্রশিকার মোড় এলাকার কর্মকার হুমায়ুন আহমেদ জানান, এ শিল্পের মূল উপাদান হলো কয়লা, কিন্তু কয়লা সংকট এ শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় নতুন করে কেউ এই পেশার সাথে জড়িত হতে চাচ্ছে না। তবে বছরের অন্যান্য সময় আমাদের কাজ না থাকলেও ঈদুল আজহায় বিক্রি ভালো হয়।

বরমী এলাকার কর্মকার আবুল হোসেন জানান, বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধাতব সরঞ্জাম তৈরি করতে অনেক খরচ হয়, তবে যারা ভালো সরঞ্জাম পেতে আগ্রহী তারাই কামার পল্লীতে আসেন।

একই বাজারের প্রবীন কর্মকার বাবুল চন্দ্র জানান, বছরের অন্যান্য সময় দিনে ৪শত-৫শত টাকা আয় হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩-৪ হাজার টাকায়। তার মতে, বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির স্টিল জাতীয় জিনিষের ভিড়ে আমাদের লোহার তৈরি জিনিষের কদর কমে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তবে তার দাবি, শ্রীপুরে কর্মকারদের একটি সংগঠন থাকলে সুবিদা হত।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)