‘সাতচল্লিশের পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনায় ছিল না’

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০১৮, ২০:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সাতচল্লিশের পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনায় ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ে বঙ্গবন্ধু একজন পরিণত রাজনীতিবিদ। তার রাষ্ট্রভাবনায় ছিল শুধুই বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে পাকিস্তান রাষ্ট্র ছিল তার যাত্রাবিরতির মতো। যে কারণে তিনি চরম ধৈর্যের সঙ্গে নানা ধাপ অতিক্রম করেন। সবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এসে স্বাধীনতার ডাক দেন। যেই ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাত কোটি বাঙালি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

মঙ্গলবার এশিয়াটিক সোসাইটির মাসিক সাধারণ সভায় ‘পাকিস্তান আন্দোলন, বাঙালির রাষ্ট্রভাবনা ও বঙ্গবঙ্গু’ শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘রাজনীতিতে নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বঙ্গবন্ধুর ছিল সেই নেতৃত্ব। বাঙালির আলাদা রাষ্ট্রের হাজার বছরের যে স্বপ্ন সেটি তার সেই ক্যারিশাটিক নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনা সম্পর্কে অধ্যাপক রশিদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘৪৭- এর পূর্বে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে পাকিস্তান আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।  একই কারণে অনেকের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হয় বঙ্গবন্ধু জীবনে দুটি রাষ্ট্র, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন- প্রথমটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন আর দ্বিতীয়টি প্রতিষ্ঠায় নিজ নেতৃত্বদান।’

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই  জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে পাকিস্তান রাষ্ট্রধারণা সম্বন্ধে বক্তব্য থেকে স্পষ্টত দেখা যায়,  ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একক পাকিস্তান রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র-ধারণা ছিল না। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ প্রদেশ/ অঙ্গরাষ্ট্রসমূহের হাতে পর্যাপ্ত স্ব-শাসন ক্ষমতা দিয়ে ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্ডিয়া’ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। ’

 জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রচুর বই পড়তেন। কারাগারে থাকাকালীন তিনি দেশি-বিদেশি প্রচুর বই পড়েছেন। বিশ^খ্যাত লেখক হেনরি, ডেভিড ও থরোর বই পড়েছেন। তাদের নাম অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে রয়েছে।  তার মধ্যে বিশ্বরাজনীতি নিয়েও স্বচ্ছ ধারণা ছিল।

অধ্যাপক রশিদ বলেন, একাত্তরের পর বঙ্গবন্ধু বেশিদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেননি। তার অসমাপ্ত কাজ তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজকে বিশ্বে রোল মডেল। উন্নয়নের বিস্ময়। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। আজকের পাকিস্তান এবং একাত্তরের আগেরকার পাকিস্তানের দিকে তাকালে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ কোথায় উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, তবে এটা ঠিক যে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে আমরা অবশ্যই তা উৎরাতে পারব। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মেজবাহ-উস সালেহীন। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ড. সাব্বির আহমেদ। অন্যান্যের মধ্যে সোসাইটির অপর সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. হারুনর রশিদ খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাজাহান মিয়া, সদস্য অধ্যাপক দুলাল ভৌমিক, সাংবাদিক সৈয়দ তোশারফ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সোসাইটির সদস্যরা উম্মুক্তপর্বে আলোচনায় অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এমএম/জেবি)