বঙ্গবন্ধু জাতিকে শৃঙ্খলা শেখাতে চেয়েছিলেন

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০৯:৫৫

ঢাকা পৃথিবীর বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ভয়াবহ যানজট, ধুলাবালি, কালো ধোঁয়া, শব্দ দূষণ, অব্যবস্থাপনা আর অবিশ্বাস্য বড় জনসংখ্যার চাপ ঢাকা শহরকে এই অবস্থায় নিয়ে গেছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই বললেই চলে। কিছু মানুষ ঢাকায় বেশ ভালো থাকেন। যাঁদের গাড়ি আছে, সরকারি প্রটোকল আছে তাদের খুব একটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু বাকি মানুষগুলোর বেশ কষ্ট হচ্ছে। এমন ঢাকা বা বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখতে চাননি। বঙ্গবন্ধুর সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের আজকের চেহারা এমন থাকত না। দেরিতে হলেও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

একটি দুর্নীতিমুক্ত, সুব্যবস্থাপনা সম্পন্ন, সমতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী পশ্চিমা শক্তির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশেরই কিছু বখাটে সেনা কর্মকর্তা হত্যা করেছিল আমাদের মানবতাবাদী জাতির জনককে। অথচ মহান নেতা চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। প্রথম মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাঙালির নিজস্ব একটি রাষ্ট্র অর্জন করে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে তাঁকে ব্যর্থ করতে বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর আদর্শ, তাঁর স্মৃতি, তাঁর মুখ-নিঃসৃত প্রতিটি কথা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য, বিশ্বের যে কোনো মানবতাবাদী মানুষের জন্য অনিবার্য এক আধেয় হয়ে রয়েছে।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সশস্র মুক্তিযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠে। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় বাঙালির উপর নৃশংস হামলা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেও ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ‘স্বাধীনতা ও মুক্তি’ ও স্বাধীনতা অর্জনের রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চেই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন পরিষ্কার বলা হয়েছিলো, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

৭ই মার্চ স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা দেয়ার পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু নিয়মিতভাবে মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়ে গেছেন। সবাইকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।

যুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি মুজিবকে কেন্দ্র করে একদিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ যুদ্ধ করে গেছেন, অন্যদিকে পুরো বিশ্বে মুজিবের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশের পক্ষে তীব্র জনমত তৈরি হয়েছে। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় আপামর জনসাধারণ, মুক্তিবাহিনী, মুজিববাহিনী, কাদেরিয়া বাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত প্রয়াসে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেয়া ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা তুলে ধরেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিন করে তুলেছিল সেসময়ের বিরোধী শক্তিগুলো। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-এ চার মূলনীতিকে সন্নিবেশিত করে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন করেন। একটি বৈষম্যহীন, সমতা-ভিত্তিক মানবতাবাদী, সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র কায়েমের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটা কৃষিনির্ভর আধা-সামন্ত সামাজিক অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের সংগ্রামকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজনৈতিক মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে সফল হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে গিয়ে জাতির জনক গোড়াপত্তন করেছিলেন ‘বাকশাল’ এর।

‘বাকশাল’ মানে কী? আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহ ‘বাকশাল’ প্রসঙ্গে যুগ যুগ ধরে এমনই নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিও বাকশাল নিয়ে কথা বলতে সবসময় স্বস্তিবোধ করেন না। ফলে বাকশাল সম্পর্কে জেনে-না জেনে একপ্রকার নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বড় হয় এদেশের নতুন প্রজন্ম। অথচ বাকশাল হতে পারত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শক্তিশালী প্লাটফর্ম।

বাকশাল কোনো একনায়কতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারণা ছিলনা। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনে সরকারি-বেসরকারি উৎপাদন ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক, আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে ভাষণে তিনি বলেন, ‘আপনার মনে আছে যে, সংবিধান যখন পাস করা হয়, আমি বলেছিলাম যে, এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শোষণহীন সমাজ-ব্যবস্থার জন্য যদি দরকার হয়, এই সংবিধানের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হবে’।

জাসদের গণবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন-হত্যা, আওয়ামীলীগের এক শ্রেণির নেতা–কর্মী ও আমলাদের দুর্নীতি, সরকারি নানা তহবিলের তসরুফ, পাকিস্তানপন্থী সাংবাদিক ও অন্যান্য বুদ্ধিজীবী সমাজের যোগসাজশে সাংবাদিকতার নামে সরকার-বিরোধী সিস্টেম্যাটিক অপপ্রচার ইত্যাদি নানা অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের সর্বস্তরে শৃঙ্খলা এনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধু বাকশাল ব্যবস্থার সূচনা করেন। সংসদের ভাষণে তিনি বাকশাল সম্পর্কে আরও বলেছিলেন, ‘অ্যামেন্ডেড কনস্টিটিউশনে যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি, তাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র। এখানে জনগণের ভোটাধিকার থাকবে। এখানে আমরা শোষিতের গণতন্ত্র রাখতে চাই’।

গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নিমিত্তে নিমিত্তে প্রণীত বাকশালকে জাতির পিতা ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। জাসদের গণবাহিনী ও অন্যান্য রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ করে সারাদেশে শৃঙ্খলা আনতে চেয়েছিলেন তিনি। যেসব রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদেরকেও নতুন সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান ছিল জাতির পিতার। সংসদে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘যারা দেশকে ভালবাসেন, চারটি প্রিন্সিপল-কে ভালবাসেন-জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চারটিকে, তাঁরা আসুন, কাজ করুন। দরজা খোলা আছে। সকলকেই আহ্বান জানাচ্ছি। যারা এই মতে বিশ্বাস করেন। যারা এই মতে বিশ্বাস করেন, তাঁদের প্রত্যেকেই আসুন, কাজ করুন, দেশকে রক্ষা করেন। দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান, মানুষের দুঃখ দূর করুন। আর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাকারবারিদের উৎখাত করুন’।

১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাকশাল কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন জাতির পিতা। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ এর বিধ্বস্ত অর্থনীতি, পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওনা না পাওয়া ইত্যাদি কথা বলে বাকশালের রূপরেখা নিয়ে পুনরায় কথা বলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফরম অব গভর্নমেন্ট করেছি। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টের নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে নমিনেশন দেওয়া হবে। জনগণ বাছবে, কে ভাল, কে মন্দ। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র, আমরা চাই না শোষকের গণতন্ত্র’।

বাকশালের ফরমেটে সরকার ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘২৫/৩০ বৎসরে বাংলায় কোন জমি থাকবে না হাল চাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সেই জন্য আজকে আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে। এটা হল তিন নম্বরের কাজ। এক নম্বর কাজ হল-দুর্নীতিবাজ খতম করা। দুই নম্বর হল-কলে-কারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রোডাকশন বাড়ানো। তিন নম্বর হল-পপুলেশন প্ল্যানিং। চার নম্বর হল, জাতীয় ঐক্য’।

নতুন সিস্টেমের গ্রাম বাংলার অবস্থা কী দাঁড়াবে সে বিষয়ে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেবনা। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাব। তা নয়, পাঁচ বৎসরের প্ল্যানে বাংলাদেশ ৬৫ হাজার গ্রামে একটি কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভ। এর জমি মালিকের জমি থাকবে। কিন্তু তার ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ,- যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকে এই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এগুলি বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিলে যারা টাউট আছেন, তাদের বিদায় দেওয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচান যাবেনা। এই জন্যই ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে’।

আমলাতন্ত্রকে পুরোপুরি বদলে দিতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘ষাটটি সাবডিভিশন হবে ৬০টি জেলা হবে। প্রত্যেক জেলার জন্য একজন গভর্নর থাকবে। সেখানে ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তাঁর অধীনে এসপি থাকবেন। দলের প্রতিনিধিগণ থাকবেন, সংসদ সদস্যগণ থাকবেন, জনগণের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কাউন্সিলে সরকারি কর্মচারীরাও থাকবেন। প্রত্যেক জেলায় অর্থাৎ বর্তমান মহকুমাসমূহে একটি প্রশাসনিক কাউন্সিল থাকবে এবং তার একজন গভর্নর থাকবেন। তিনি স্থানীয়ভাবে শাসনব্যবস্থা চালাবেন। শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। জেলা গভর্নরের কাছে কাছে যাবে আমার ওয়ার্কস প্রোগ্রামের টাকা। তার কাছে যাবে আমার খাদ্য সামগ্রী। তার কাছে যাবে আমার টেস্ট রিলিফ, লোন, বিল ও সেচ প্রকল্পের টাকা। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের ডাইরেক্ট কন্ট্রোলে এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল ডিসট্রিক্ট এডমিনিস্ট্রেশন পরিচলানা করবে’।

এক বছরের মধ্যে থানা এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল করতে হবে বলে সবাইকে নির্দেশ দিয়ে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সেখানে বাকশালের রিপ্রেজেন্টেটিভ, কৃষকের রিপ্রেজেন্টেটিভ থাকবে, শ্রমিক থাকবে, যুবকের থাকবে, মহিলাদের থাকবে। একজন গভর্নর থাকবেন, যিনি হবেন হেড অব এডমিনিস্ট্রেশন। সেখানে মেম্বার অব পার্লামেন্ট গভর্নর হতে পারেন। সেখানে পার্লামেন্টের মেম্বার নন, এমন পলিটিক্যাল ওয়ার্কার হতে পারেন। সেখানে সরকারি কর্মচারী-যাকে বিশ্বাস করি, তিনিও হতে পারেন’।

বাকশাল এর আইডিয়াকে বঙ্গবন্ধু আমাদের নিজেদের সমাজতন্ত্র বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি, সে অর্থনীতি আমাদের, সে ব্যবস্থা আমাদের। কোন জায়গা থেকে হায়ার করে এনে, ইম্পোর্ট করে এনে, কোন ইজম চলেনা। এদেশে-কোন দেশে চলে না। আমার মাটির সঙ্গে, আমার মানুষের সঙ্গে, আমার কালচারের সঙ্গে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে, আমার ইতিহাসের যুক্ত করেই আমার ইকনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। কারণ আমার দেশে অনেক অসুবিধা আছে। কারণ আমার মাটি কি, আমার পানি কত, আমার এখানে মানুষের কালচার কি, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড কি, তা না জানলে হয়না। ফান্ডামেন্টালি আমরা একটা শোষণহীন সমাজ গড়তে চাই, আমরা একটা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি করতে চাই। বাট দি সিস্টেম ইজ আওয়ার্স’। উই ডু নট লাইক টু ইম্পোর্ট ইট ফ্রম এনিহোয়ার ইন দি ওয়ার্ল্ড’।

উপরে উল্লেখিত কথাগুলো জাতির জনকের নিজের মুখের কথা। অথচ আমরা না জেনে, না বুঝে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী বাকশালের ব্যাখ্যা করে চলেছি। বিএনপি-জামাত ও তথাকথিত ‘সুশীল’ সমাজ বাকশালের অপব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। আর আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো বাকশালের প্রকৃত আদর্শ ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে তেমন কোনো চেষ্টা করছেন না বলেই মনে হয়।

অথচ জাতির পিতা দেশের গরিব মানুষের ভাগ্য ফেরাতে শেষ চেষ্টা হিসেবে এই বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার শত্রুরা শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাকে চিরতরে ব্যর্থ করে দিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে প্রায় পুরো পরিবারসহ হত্যা করে। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান জাতির জনকের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ৬ বছর বঙ্গবন্ধু কন্যাদের দেশে আসতে দেননি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুধু দলকেই নয়, পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ২০ বার হামলা করেছে বাংলাদেশের শত্রুরা। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জনগণের নেতা শেখ হাসিনা। পরিষ্কার ভিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। একটি মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। শেখ হাসিনার এই বিশাল অর্জনের সংগ্রামে তাঁকে যোগ্য সান্নিধ্য দিয়ে চলেছেন, তাঁর ছেলে, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :