বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির বয়ানে জিয়ার নাম

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪৬ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৮, ২১:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর দুই খুনি সেনা কর্মকর্তা ফারুক রহমান আর আব্দুর রশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তৎকালীন সানডে টাইমসের সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাস।

এই সাক্ষাৎকারে দুই খুনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখলে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এখানে হত্যার পূর্বের ঘটনা, পরিকল্পনা আর আগে পরে কার কার সঙ্গে কথা হয়েছে, সেই বিষয়টিও উঠে এসেছে। আর তারা জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকেও হত্যার পরিকল্পনা জানান তারা। আর প্রথম বৈঠক হয় মার্চের শেষে। জিয়াউর রহমান সে সময় তাদেরকে এগিয়ে যেতে বলেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই খুনি জানান, জাতির জনককে হত্যার পর তাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন জিয়াউর রহমানই।

জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ আগস্ট এক আলোচনায় এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে বিচার না করতে পারার আক্ষেপ থেকে যাবে তার।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। আর সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তিনি রাষ্ট্রপতিও হয়ে যান। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ বরাবর তাকে এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে অভিযোগ করে। যদিও বিএনপি এটা অস্বীকার করে সব সময়।

মাসকারেহানসকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির দেয়া সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

মাসকারেনহাস: আমাদের বলেন কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল। যিনি বাঙ্গালি জাতির পিতা। আপনারা মুজিবকে ‘শোধরাবার’ জন্য চেষ্টা করেছিলেন কি না?

আবদুর রশীদ: না, আমি কোন চেষ্টা করিনি। কারণ আমি ছিলাম সেনাবাহিনীর জুনিয়র কর্মকর্তা। আমার কোন সুযোগ ছিল না তাকে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার কথা বলা।

মাসকারেনহাস: তোমরা তাকে হত্যার কথা ভেবেছিলে?

আবদুর রশীদ: তিনি ছিলেন সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। তার বক্তব্য দিয়ে সবাইকে তিনি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। তার ছিল অনেক ভালো গুণাবালী। তিনি যেকোন সময় জনসাধরণকে তার বক্তব্য দিয়ে জাগিয়ে তুলতে পারতেন।

যদি তিনি জীবিত থাকতেন তাহলে আমাদের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টকর হতো। তিনি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করতেন না।

মাসকারেনহাস: এ কারণেই কি আপনারা তাকে হত্যা করেন?

আবদুর রশীদ: হ্যাঁ একারণেই তাকে হত্যা করি।

মাসকারেনহাস: এরপর কীভাবে হলো?

ফারুক রহমান: আমাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন জিনারেল জিয়া। কারণ তিনি মুজিবের পছন্দের ছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় আমি তার সাথে বৈঠক করি।

জেনারেল জিয়া বলেন, আমি সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে এই ঘটনায় জড়িত হতে পারি না। বিষয়টি নিয়ে যদি তোমরা জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে এটা করতে চাও এ গিয়ে যাও। সে তখন বারান্দায় হাটছিল।

আমি তখন তাকে বললাম, আমরা পেশাদার সৈনিক। আমরা দেশের জন্য কাজ করব, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমরা জুনিয়র অফিসাররা কাজ করছি। এতে আমরা আপনার সমর্থন চাই এবং আপনার নেতৃত্ব।

মাসকারেনহাস: কর্নেল রশিদ, মুজিব হত্যার আগেই কি আপনারা মোশতাকের (বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক) সঙ্গে দেখা করেছিলে?

আবদুর রশীদ: হ্যাঁ, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আমি তার সঙ্গে দেখা করি। আমি তাকে ধারণা দেই যে, এটা ১৩ অথবা ১৪ আগস্ট ঘটতে পারে।

মাসকারেনহাস: আপনারা কি মুজিবকে হত্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন?

আবদুর রশীদ: হত্যা সম্পর্কে নয়, কিন্তু মুজিবকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যূত করার কথা জানিয়েছিলাম। এবং এভাবেই মুজিবকে হত্যা করা হয়।  

(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি)