২০ বছর আগের ওষুধে অস্ত্রোপচার!
প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৮ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪০
অস্ত্রোপচারে ২০ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ওষুধের ব্যবহারের মতো বিস্ময়কর ঘটনার প্রমাণ মিলেছে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
অনিয়মের এখানেই শেষ নয়, এই চিকিৎসালয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পরও রোগ পরীক্ষা করা হতো। তবে সেই রিপোর্ট দেয়া হতো আন্দাজে।
হাসপাতালটির পরিবেশ এতটাই নোংরা যে, অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রের একে ‘ময়লার ভাগাড়’ বলেছেন।
হাসপাতালের মালিকপক্ষ কেবল ‘ভুল হয়ে গেছে, আর করব’ না বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পান্থপথের ‘বাংলাদেশ স্পাইন অ্যান্ড অর্থোপেডিক জেনারেল হাসপাতাল’ পরিদর্শন করে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় এই চিত্র দেখা যায়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাব-২ এর এই অভিযানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
হাসপাতালের পরিবেশ দেখে হতভম্ভ ম্যাজিস্ট্রেট মনোকষ্ট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানকে হাসপাতাল বললে ভুল হবে। এটাকে ময়লার ভাগাড় বললে ভুল হবে না। তাদের কোনোকিছুই ঠিক নেই। খুবই ব্যথিত হয়েছি এখানে অভিযান চালিয়ে। এতদিন তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছে।’
প্রায়ই বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই হাসপাতালে যা পাওয়া গেছে সেটি বিস্ময়ের মাত্রাকেও অতিক্রম করে গেছে অভিযান চালানো দলকে।
অভিযান চলাকালে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে মাকড়সার জাল দেখা যায়। সেখানকার শয্যায় ছিল ধূলোবালি।
এখানে রোগ পরীক্ষাগারে অনিয়ম আরও ভয়াবহ। তাদের কোনো মেশিন কাজ করে না। ফলে পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া হতো বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। জানান, যেসব কাগজে রিপোর্ট দেয়া হতো, সেখানে আগেভাগেই বেশ কিছু ডাক্তারের সিল মারা ছিল। হাসপাতালের কর্মীরা পরে রিপোর্ট বসিয়ে দিতেন।
ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে দেখা গেছে পুরাতন সব ওষুধ, মেয়াদউত্তীর্ণ স্যালেইনের পাইপ, বিভিন্ন রকম অপরেশনের নিডল যার সবই মেয়াদহীন ও ময়লার মধ্যে পরে ছিল।’
‘এছাড়া বেশ কিছু ওষুধ ছিল যার মেয়াদ ১৯৯৮ সালে শেষ হয়ে গেছে। তাদের ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও খারাপ অবস্থা।’
তবে এতসব অনিয়মের পরও হাসপাতালটি কৃপা পেয়েছে সেটি বলাই যায়। কারণ, তাদেরকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, ‘রোগীদের কথা বিবেচনা করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়নি।’
হাসপাতালের কর্মীদের কোনো ব্যাখ্যা ছিল না এসব ঘটনায়। এখানকার দুই জন মালিকের একজন সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমরা দুঃখিত। ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর করব না।’
হাসপাতালের কর্মীরা জানান, এই চিকিৎসালয়টির মালিক দুইজন। তবে তাদের নাম কেউ বলতে রাজি হলেন না।
এদিকে অভিযানকালে হাসপাতালের মালিকপক্ষের বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। তারা জরিমানা বন্ধ করতে প্রশাসন ও সরকারে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিচয় দিতে থাকেন।
উপস্থিত র্যাব কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'মালিকপক্ষের একজন আমাকে সাইডে ডেকে নিয়ে বলেন, আমার বন্ধু র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তা। আরেকজন প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আছেন। এই ম্যাজিস্ট্রেট (সারওয়ার আলম) কি তার সঙ্গে কথা বলবেন?’
জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যারকে গিয়ে বলেন। তবে সাবধান, স্যার (সারওয়ার আলম) কিন্তু কারো কথা শুনেন না। বেশি লাফালে কিন্তু সব বন্ধ করে দেবেন। কারণ উনি অনেক বড় বড় হাসপাতালে অভিযান করেছেন, কারও সুপারিশ রাখেন না।'
বিআরবি হাসপাতালকেও জরিমানা
এর আগে একই এলাকায় স্বনামধন্য বিআরবি হাসপাতালে অভিযানে যায় র্যাবের দল। সেখানে গিয়ে দেখা যায় তাদের ব্লাড কালচার সঠিকভাবে করছে না৷
এছাড়া বেশ কিছু রক্তের পরীক্ষা বাইরে থেকে করে আনা হতো এখানে যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
এই হাসপাতালের ১৩ তলায় একটি ওষুধের গুদাম ছিল যেটার কোনো অনুমোদন ছিল না। পরে এসব অনিয়মের দায়ে তাদেরকে জরিমানা করা হয় দুই লাখ টাকা।
(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএস/ডব্লিউবি/জেবি)