ফরিদপুরে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৪৬

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর

ফরিদপুরে গরুর হাটে পশুর অঢেল আমদানি ঘটতে দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সরব উপস্থিতে জমে উঠেছে এবারের কোরবানি পশুর হাটগুলো। তবে ক্রেতাদের চাহিদা মাঝারি সাইজের দেশি গরুর প্রতি।

ফরিদপুর শহরের সর্ববৃহৎ টেপাখোলা গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র। বাজারে অন্যবারের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে বিক্রেতা ও ক্রেতারা উভয়েই বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার (২১ আগস্ট ঈদের আগের দিন) সর্বশেষ হাটগুলোতে কেনা-বেচা বেশি হবে। তাদের প্রত্যাশা ওই হাটে বেচাকেনা আরও ভালো হবে।

টেপাখোরার এই হাটে আসা সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকা থেকে ১৭টি গরু নিয়ে বাজারে এসেছিলেন গরুর ব্যাপারী আলী আকবর শেখ। তিনি বলেন, এ এলাকায় টেপাখোলা গরুর হাটের অনেক নাম ডাক ও সুনাম। এ জন্য গরু নিয়ে তিনি এসেছেন ভালো দামের আশায়।

মাগুরা থেকে ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন গরুর ব্যাপারী হালিম মোল্লা। তিনি বলেন, এই ১৩টি গরু তিনি কিনেছেন ১৬ লাখ টাকা দিয়ে। দাম ১৮ লাখ উঠলে তিনি ছেড়ে দেবেন।

ফরিদপুরের এই পশুর হাটে প্রথমবারের মতো এসেছেন রাজবাড়ীর মিঠুন মাতব্বর। তিনি বলেন, আমার বাবা অনেকদিন ধরেই গরুর ব্যাপারী হিসেবে কাজ করেন। এবার তিনি নিজের এসেছেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে ব্যাপারীর এক ট্রাক গরু নিয়ে এসেছেন ট্রাক চালক হুমায়ন শেখ। তিনি বলেন, এবার গরু আনতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়নি। বেশ ভালোভাবেই আসতে পেরেছেন।

মাগুরার বাগিয়া এলাকা থেকে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী সিদ্দিকুর রহমান। তিনি গরুগুলো কিনেছেন ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে। তিনি এগুলো বিক্রি করতে চান ৪০ লাখ টাকায়।

সাধারণ ক্রেতারা গরুর হাতে এসে ঘোরাফেরা করছেন, দাম জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সাধারণ ক্রেতাদের গরুর কিনতে কম দেখা গেছে।

শহরের পশ্চিম আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা শেখ জলিল বলেন, গরুর হাটের হাবভাব দেখতে এসেছি। ঈদের আগের দিন আরেকটি হাট পাব। সেদিন কিনব। তিনি বলেন, ঈদের এত আগে থেকে গরু কিনে রক্ষাণাবেক্ষণ করা কঠিন।

ওই এলাকারই আরেক ক্রেতা বাবুল শেখ বলেন, এ বছর গরুর দাম একটু কম মনে হচ্ছে। তবে আগামী হাটে বাড়বে বলে মনে হয়। তিনি বলেন, হাটে মাঝারি সাইজের গুরুর চাহিদা বেশি।

শহরের কানাইপুর এলাকার সেলিম মোল্লা বলেন, হাটে গরুর আমদানি ভালো; তবে বেচাকেনা কম হচ্ছে। তিনি জানালেন, ঈদের দুইদিন আগে মূলত গরু কেনাবেচা বেশি হবে।

ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের বিলমাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা জিন্না শেখ জানান, তিনি দুটি গরু কিনেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে। গত বছর এ দুটি গরু দেড় লাখ টাকার কমে কিনতে পারতেন না।

সাধারণ ক্রেতারা গরু কম কিনলেও ছোট ছোট ব্যাপারীরা গরু কিনছেন প্রচুর। ঢাকার দোহার এলাকা থেকে এসেছেন মো. শাহজাহান। তিনি জানান, তিনি সাতটি গরু কিনেছেন আট লাখ টাকা দিয়ে। এ গরু ট্রলারে করে ঢাকায় নিয়ে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।

টেপাখোলা গরু হটের ইজারাদারের প্রতিনিধি এম এ সালাম বলেন, টেপাখোলা হাটটি একটি নিরাপদ হাট বলে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েরই আকর্ষণ এ হাটে। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন আমরা আরেকটি হাট পাব সেই হাটে বেশি গুরু বিক্রয় হবে।

ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, গরু ব্যপারীরা যাতে নির্বিঘ্নে হাটে আসতে পারেন, ক্রেতারা যাতে কোন সমস্যা ছাড়া গরু হাট থেকে কিনে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে পশুর হাটে পশুর স্থাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তত্ত্বাবধানে এই মেডিকেল টিম কাজ করছে প্রত্যেক পশুর হাটে।

ফরিদপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি তালিকাভুক্ত জেলার সকল বাজারের আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে, আমরা চেষ্টা করছি সুস্থ ও সবল পশু হাটগুলোতে বেচাকেনা হোক।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া এবারের পশুর হাটের নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, পশুর হাটগুলো ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় হাটগুলোতে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাবের টহল টিম, ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পশু স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পশু স্বাস্থ্য টিম।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)