১১ শহরে পশু জবাইয়ে দুই হাজার ৯৩৬টি স্থান নির্দিষ্ট

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৯:১৪ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৯:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও যত্রতত্র পশু কোরবানি না দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এজন্য দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে দুই হাজার ৯৩৬টি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছেন।

আগামী বুধবার দেশজুড়ে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। আর এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আর এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ সারাদেশে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ ও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ নিয়ে এক সভা ডাকেন এলজিআরডি মন্ত্রী।  এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে বর্জ্য অপসারণ, পরিবেশ রক্ষা-দুটোই সহজ হয়।

তবে সভায় দুইজন মেয়রের একজন জানান, তারা নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। তবে একজন মেয়র জানান, তার শহরে এ নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে।

সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী পশু জবাইয়ের জন্য যেসব স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পশু কোরবানির জন্য এই সংখ্যা যথেষ্ট। তারপরেও অনেকে যদি সেই জায়গায় না আসে সেক্ষেত্রে আমি মেয়রদের অনুরোধ করব, আপনারা যথেষ্টভাবে প্রচার-প্রচারণা করুন। যাতে করে মানুষ নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করতে আসে।’

‘নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করতে আসতেই হবে। আর কোনো রকম খোলা স্থানে কোররবনি করাকে আমরা মোটেই উৎসাহিত করি না।’

অবশ্য এ বিষয়ে জোরাজুরি না করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধিদেরকে কাজে লাগানে চান এলজিআরডি মন্ত্রী। বলেন, ‘খোলা স্থানে কোরবানি করলে শাস্তির নিয়ম আছে। তবে ধর্মীয় বিষয়ে এসব জোরজবরদস্তি করতে গেলে মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। কাজেই আমাদের উচিত পাড়ায় পাড়ায় সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট লোক নিয়োগ করা যাতে করে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে যাতে করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাড়িতে যদি কেউ কোরবানি করে তাহলে তাদের তো আর জোর করার বিষয় নেই। তবে সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে কোনকরম পরিচ্ছন্নতার অভাব যেন এলাকাবাসী না করে। নিজেরা কোরবানি করে যদি নিজেরা পরিষ্কার করে ফেলেন তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

মন্ত্রী বলেন, যদি কোন নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা হয় তাহলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক সুষ্ঠভাবে করা যায়।

মেয়র খোকন হতাশ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা তিন বছর যাবতই এভাবে কোরবানির ব্যবস্থাপনা করে আসছি। তবে তেমন সাড়া পাইনি। তবে আমরা মসজিদগুলোর প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেছি, প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

‘সাধারণ মানুষ তাদের নিজ বাড়িতে কোরবানি করতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এটা একটি উৎসবের মতো। আমরা এটাকে সুশৃঙ্খলভাবে করা যায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি।’

বর্জ্য অপসারণ নিয়ে মেয়র খোকন বলেন, ‘আমরা গেলবার নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়েছিলাম। এ সময়ে মধ্যে কোরবানির বর্জ্য পরিস্কার করতে হবে। সেটা আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। এবারও আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা আমাদের শহরকে পরিস্কার করতে স্বচেষ্ট হব।’

এবারও হাটে পশু কেনার পর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে পলিথিন ব্যগ ও ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ করা হবে বলেও জানান মেয়র। বলেন, এর সবই পরিচ্ছন্নতার জন্য করা হচ্ছে। নগরবাসী যেন এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকেন।

নারায়ণগঞ্জে আগ্রহ বাড়ছে

সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভি রহমান বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কোরবানির জন্য ১৮৩টি স্থান নির্ধারণ করেছি।  দুই বছর আগে যখন আমরা এ নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির আহ্বান জানাই সেই বছর খুব বেশি সাড়া মেলেনি। তবে গেল বছর বেশ সাড়া মিলেছে। আমরা আশা করি এবার জনগণ নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করবে।

মেয়র আইভি কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, একসঙ্গে এতো পশু জবাই করার মতো পর্যাপ্ত কসাইয়ের অভাব আছে। এরফলে মানুষ স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। ফলে তারা নিজের বাড়ির সামনেই পশু জবাই করে।

পানির ব্যবস্থা ও খোলা মাঠ ও সামিয়ানা করে দিতে পারলে মানুষ এদিকে আগ্রহী হবে বলেও মনে করেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র।

রক্তের নদী যেন তৈরি না হয়

দুই বছর আগে ঈদুল আজহাতে বৃষ্টির পানিতে পশুর রক্ত মিশে ঢাকায় রক্তের যে রকম ‘রক্তের নদী’ তৈরি হয়েছিল, সেটি যেন আর না হয়, সে জন্য নগরবাসীকে দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেন এলজিআরডি মন্ত্রী।

২০১৬ সালের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ওই বছর কোরবানির পর বর্ষায় পানি জমে গিয়েছিল। একটি স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম পানির রক্তযুক্ত স্রোতের ছবি প্রচার করে। এটা নিয়ে স্থানীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। বিদেশি একজন জনগণ আমাদের দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত নাও হতে পারে। ফলে এতে করে আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে আমাদের দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

‘এবারও কোরবানির সময় বর্ষা (বৃষ্টি) হতে পারে। সেক্ষেত্রে নাগরিক ভাইদের আমি অনুরোধ করব, বর্ষায় জমে থাকা পানির সাথে যাতে রক্ত মিশ্রিত না হয় সেদিকে নজর রাখবেন। এতে করে আমাদের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

‘দেশের প্রতি আমাদের সকলের দায়িত্ববোধ রয়েছে। আমরা এমনকিছু করব না যাতে দেশের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি)