শিক্ষকের মারধরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, সহপাঠীদের বিচার দাবি

মাদারীপুর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন হাওলাদারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী আক্তার নামে দশম শ্রেণির মানবিক শাখার এক ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই প্রধান শিক্ষক পালিয়ে গেছেন।

শিক্ষকের নির্যাতনে সহপাঠী আত্মহত্যা করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

এদিকে এই ঘটনা একটি প্রভাবশালী মহল ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর গ্রামের ইকবাল বেপারীর প্রথম পক্ষের মেয়ে সাথী আক্তার তার মামার বাড়ি একই উপজেলার মধ্য পেয়ারপুর গ্রামে থেকে চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। গত শনিবার সাথীর সঙ্গে তার দুই সহপাঠীর কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনাটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নূর হোসেন হাওলাদার জানতে পেরে সাথী ও তার বান্ধবীদের ডেকে মারপিট ও গালিগালাজ করেন। এ অপমান সইতে না পেরে সাথী ওই দিন স্কুল থেকে মামা বাড়ি ফেরার পথে চরমুগরিয়া থেকে বিষ কিনে নিয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় বাড়ির সবার অলক্ষ্যে সে বিষ পান করে। মুমুর্ষূ অবস্থায় মামা বাড়ির লোকজন সাথীকে প্রথমে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাথীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরদিন সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাথী মারা যায়।

এ সংবাদ মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় পৌঁছলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় তারা চরমুগরিয়া বন্দরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

নিহত সাথীর সহপাঠী রিতু আক্তার ও অন্তরা আক্তার জানায়, ঘটনার দিন সাথীর সঙ্গে দুই বান্ধবীর ঝগড়া হয়। স্যার (প্রধান শিক্ষক) সাথীকে মারধর ও গালাগাল করে রোদে দাঁড় করে রাখায় সে মারাত্মক অপমানিত হয়। এই অভিমান সইতে না পেরে সাথী আত্মহত্যা করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদিকা সানজিদা ইসলাম তানিয়া বলেন, এই ঘটনা একটি প্রভাবশালী মহল ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ব্যাপারে সাথীর মামি মুক্তা বেগম বলেন, আমার ভাগ্নিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মারপিট ও গালিগালাজ করে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। আমি এঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালায় প্রধান শিক্ষক মো. নুর হোসেন হাওলাদার সাথী মারা যাওয়ার পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, সাথী ও আর এক ছাত্রী গালাগালি করায় আমি তাদের দুইজনকেই ডেকে এনে সবার সামনেই শাসন করে ক্লাসে পাঠিয়ে দিই। আর এই ঘটনা দুপুরে হয়েছে। সামান্য এ ঘটনায় সাথী যে ওষুধ খাবে- তা ভাবতে পারিনি। আমি তার চিকিৎসার সকল দায়ভার নিয়েছি।

তবে সাথী মারা যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ও স্কুলের সহপাঠীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে আটক করার আশ্বাস দিয়েছে। তাছাড়া নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ করেনি।

পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম এলাকা পরিদর্শন করেছে। এখনো মামলা হয়নি। মামলা হলে আমরা সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)