সিঙ্গাপুরে বৃদ্ধদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২০:৪২ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২০:৪৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

গত বছর সিঙ্গাপুরে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ১২৯ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন৷ এর আগে কখনো এক বছরে দেশটিতে প্রবীণদের এত বেশি আত্মহত্যা করতে দেখা যায়নি৷

আত্মহত্যা রোধে কাজ করা সংগঠন সামারিটানস অব সিঙ্গাপুর (এসওএস) মনে করে, সিঙ্গাপুরে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ অথচ তাদের জীবনমান উন্নয়নের দিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে ৬৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ বর্তমানের দ্বিগুণ হবে৷

সিঙ্গাপুরে বয়োজ্যেষ্ঠরা বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগে ঘাটতিসহ শারীরিক দুর্বলতা এবং নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করাসহ নানা সমস্যায় ভোগে৷

জার্মানি ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসওএস-এর ক্রিস্টিন ওয়াং সিঙ্গাপুরে বৃদ্ধদের মাঝে আত্মহত্যা বৃদ্ধির কারণ এবং তা প্রতিকারের উপায় জানিয়েছেন৷

ক্রিস্টিন ওয়াং জানান, ২০১৭ সালে আসলে সিঙ্গাপুরে আত্মহত্যার সামগ্রিক হার অন্যান্য বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম ছিল৷ দেশটির প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ৷ অথচ ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল অবধি এই হার ছিল ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ৷

যদিও ২০১৭ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় সবচেয় কম, মানে ৩৬১টি ছিল। ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষের কথা বিবেচনা করলে তা ছিল আগের যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি- ১২৯টি৷ বৃদ্ধদের মাঝে আত্মহত্যার এই উচ্চহার সিঙ্গাপুরের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার৷

বৃদ্ধদের আত্মহত্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, মূলত আত্মহত্যা বিষয়ক সামাজিক এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সচেতনতাই এর হার সামগ্রিকভাবে কমানোর পেছনে সহায়তা করেছে৷ এক্ষেত্রে এসওএস-এর সদস্যদেরও ধন্যবাদ দেয়া উচিত৷ এসওএস সক্রিয়ভাবে আত্মহত্যার কুফলের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছে এবং কারো মধ্যে আত্মুহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে৷ তবে বয়োজ্যেষ্ঠরা সম্ভবত আত্মহত্যারোধে যেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেসবের ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত নন৷ যখন তারা এসব জানেন না, তখন আরো বেশি অসহায়বোধ করেন৷ আর তাতে তারা আরো বেশি সমাজ থেকে দূরে সরে যান৷

সিঙ্গাপুরে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং একইসঙ্গে পরিবারের আকারও ছোট হচ্ছে৷ তাছাড়া বিশ্বায়নেরও একটা ভূমিকা আছে এখানে৷ কেননা, সিঙ্গাপুরের অনেক মানুষ অন্য দেশে কাজের জন্য যাচ্ছেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন৷ তাদের অনেকেই পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে যান না৷ ফলে তারা আরো বেশি একা হয়ে যান৷

বৃদ্ধদের আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে কী করা যেতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের ভালোবাসার মানুষদের এবং শুশ্রুষাকারীকে বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিকভাবে সহায়তার বিষয়ে আরো জ্ঞান দিতে হবে৷ আমাদেরকে আরো প্রচারণা চালাতে হবে এবং সতর্ক হতে হবে৷ কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসআই)