গোপালগঞ্জের কালনা ঘাট

ছিদ্র ফেরিতে যানবাহন পারাপার, ডুবির আশঙ্কা

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ

 

মধুমতি নদীতে ছিদ্র ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে নানা ধরনের যানবাহন। শ্যালো মেশিন দিয়ে ফেরিতে ঢুকে পড়া পানি বের করে দেয়া হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ। বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও।

ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যানবাহন পারাপার হচ্ছে এ ফেরিতে। যেকোনো মূহুর্তে নদীতে ফেরি ডুবির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফেরিচালক ও ইজাদাররা জানান, কালনা ঘাটের ৪ নম্বর ফেরির তলদেশে ছিদ্র ও উপরের অংশ ফেটে গেছে। এতে গোপালগঞ্জের কালনা ফেরিচালক ও ইজারাদাররা এই আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি সেচে ফেরি চালানো হচ্ছে। ঘাটে ১৬ নম্বরের আরও একটি ফেরি থাকলেও তার ইঞ্জিনের শক্তি কম থাকায় চালানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ঝুকি নিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে কালনা ঘাটের শত শত যানবাহন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধুমতি নদীর ওপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনার এই ফেরি ঘাট।  প্রতিদিন নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা ও বেনাপোলসহ বেশ কয়েকটি রুটের আড়াইশ থেকে তিনশ যানবাহন এই ফেরি দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। ঝুকির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের পুরাতন এই ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন পারাপার হয়ে আসছে।

কালনা ফেরি ঘাটের ইজারাদার মঞ্জুর হাসান বলেন, ঘাটে দুটি ফেরি রয়েছে। ১৬ নম্বর ফেরির ইঞ্জিনের শক্তি কম থাকায় বর্তমান বর্ষা মৌসুমে নদীতে স্রোত বেশি থাকায় যানবাহন পারাপারের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

অন্য ৪ নম্বর ফেরির তলদেশের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন দুই তিনবার পাম্প মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হয়। বিগত ২০১৪ সালের ১৯ জুন রাতে একই কারণে ১৪ নম্বর ফেরিটি  ডুবেছিল। এটির অবস্থাও তাই। এভাবে চলতে থাকলে আবারো  যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ১৬ নম্বর ফেরির ইঞ্জিনের পাওয়ার আছে মাত্র ১৫০ হর্স পাওয়ার। বর্তমানে নদীতে যে স্রোত আছে তাতে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ হর্স পাওয়ারের দুইটি ইঞ্জিন প্রয়োজন। তা না হলে এই ফেরি দিয়ে বর্তমান সময়ে কোনো কাজ হবে না। কোরবানী ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে গাড়ির চাপ। এ অবস্থায় একমাত্র ভরসা ৪ নম্বর ফেরি। তাও আবার ছিদ্র ও ফাটা। চার নম্বরটি যদি কোনো কারণে চলাচলের অযোগ্য হয় কিংবা দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

এমনিতেই ঘাটে যখন গাড়ির চাপ হয় তখন যাত্রীরা ও চালকরা আমাদের গালাগালি করে। ঘাট স্বাভাবিক করতে দ্রুত একটি নতুন ফেরি ও ১৬ নম্বরের জন্য বেশি পাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন প্রয়োজন। তা না হলে যেকোনো সময় কালনা ঘাটে দুর্ঘটনা ঘটবে। বন্ধ হয়ে যাবে যানবাহন পারাপার।

ফেরিচালক (ড্রাইভার) নজরুল ইসলাম বলেন, ৪ নম্বর ফেরিটার বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। তলদেশে ছিদ্র রয়েছে। ঘাটে একটি মাত্র ফেরি চালু থাকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি লোড দিতে হয়। এসব কারণে ফেরির তলদেশে আরও বেশি ছিদ্র হচ্ছে ও চালায় (উপরিভাগে) ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে সব পানি ভেতরে ঢুকে পড়ে। দিনে দুই তিনবার সেচ দিয়ে ফেরি চালাতে হচ্ছে।

এখন ঘাটে একটি নতুন ফেরি দরকার। আর যে ১৬ নম্বর ফেরিটি রয়েছে তাতে ৩শ ২৪ থেকে সাড়ে ৪শ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন প্রয়োজন। দ্রুত ৪ নম্বরটি মেরামত করা না হলে আবারও যেকোনো সময় দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

ফেরির খালাসি মোখলেচুর রহমান বলেন, কালনা ঘাটের ফেরি যানবাহন পারাপারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া পল্টুন চরটির মধ্যে তিনটিতেই ছিদ্র। পানি ঢুকে কাত হয়ে পড়ে আছে। চারটি ঘাটের মধ্যে দুইপাশে দুইটি ভালো আর দুইটি খারাপ। গাড়ি ওঠা নামায় খুব সমস্যা হয়। কালনাঘাটে যে অবস্থা তাতে নতুন একটি ফেরি ও বেশি পাওয়ারের ইঞ্জিন দরকার। তা না হলে যেকোনো সময় ঘাট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কালনা ফেরিঘাটের সুপারভাইজার বেল্লাল হোসেন, ড্রাইভার হাফিজুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শ্রমিক সর্দার আকরাম সরদার, শ্রমিক রেজাউল শেখ, খালাসি ফায়েকুজ্জামান ফায়েক, কাজী মফিজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনও জানালেন একই কথা।

তারা বলেন, তিন শিফটে ৮জন ড্রাইভার, একজন সুপারভাইজার, দুইজন খালসিসহ মোট ২১জন মানুষ ফেরিতে দায়িত্ব পালন করেন। এদের সবাইকে খুব কষ্ট করে ফেরি চালিয়ে রাখতে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঘাটের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

কালনা ফেরি দিয়ে প্রতিদিন পার হওয়া খান জাহান আলী পরিবহনের চালক, জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা ভয়ে ভয়ে ফেরি পারাপার হই। ঘাটের অবস্থাও ভালো না। আর ফেরি ফুটো। পানি ফেলতে সেচ পাম্প বসিয়ে রাখতে হয়। নদীর স্রোতেও বেড়েছে। এ অবস্থায় পারাপার হতে ভয় লাগে। কোন বিপদ হলে গাড়িতো যাবেই। তার সাথে অসংখ্য মানুষের প্রাণও যাবে। তাই কালনা ঘাটে ফেরি সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার।

ওই ঘাট দিয়ে চলাচলকারি ট্রাক ড্রাইভার অহিদুল খান বলেন, কালনা ঘাটের ফেরি প্রায়ই অকেজো হয়ে পড়ে। ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। দুটি ফেরি তার একটা প্রায়ই অকেজো। ৪ নম্বর দিয়ে পারাপার হতে ভয় লাগে। এই ঘাটে আগে একটা  ফেরি ডুবেছিল। ফেরি  এই অবস্থার কারণে দুই পাড়ের অসংখ্য যানবাহনকে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমরা এর থেকে  পরিত্রাণ চাই। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেরি ডিভিশনের ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল বাশার মোবাইলফোনে বলেন, ঘাটে যে ফেরি রয়েছে তার সব কয়টির ইঞ্জিন ভালো আছে। এখন নদীতে স্রোত বেশি হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। ১৬ নম্বর ফেরির জন্য বেশি শক্তির ইঞ্জিনের জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ফেরিগুলো পুরাতন হওয়ায় একটু সমস্যা রয়েছে। তা মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে।

তবে ফেরি ড্রাইভার ইজারাদার ১৬ নম্বর ফেরিতে বেশী শক্তির ইঞ্জিন লাগানো এবং ৪নং ফেরির পরিবর্তে নতুন ফেরি দেয়ার  কথা বলেছে। বিষয়টি ফেরি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো:  শরিফুল আলম বলেন, ফেরি ডিভিশন ঢাকা ও ফরিদপুর বিষয়টি দেখভাল করেন। আমাদের কাজ ঘাটের দুই পাশের রাস্তা দেখা। তারপরও বিষয়টি ফেরি বিভাগে জানানো হয়েছে। আশা করি ফেরি বিভাগ সমস্যটি দ্রুত সমাধান করবেন।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১৪ সালের ১৯ জুন মাঝরাতে বেশ কিছু গাড়ি নিয়ে ১৪ নম্বর একটি ফেরি পশ্চিম পাড়ের পল্টুনের কাছে ডুবে যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/প্রতিনিধি/ওআর)