সড়কে আইন মানাতে কঠোর হচ্ছে সরকার

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৪৫ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ২১:৪৪

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ঢাকা শহরের ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠানামা করা যাবে না। স্টপেজ ছাড়া অন্যত্র বাসের দরজা বন্ধ থাকবে। বাসের দুটি দৃশ্যমান স্থানে চালক ও তার সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শন করতে হবে।

গণপরিবহন বিশেষ করে বাসের চালক, মোটরসাইকেল আরোহীর পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে চলাচলকারী পথচারীকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আগামী ২০ আগস্ট থেকেই এর বাস্তবায়ন শুরু করে।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দু্ই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে নগরীতে চলাচলের ক্ষেত্রে যেসব নৈরাজ্য আছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়।

শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছে, সরকার সেগুলোর আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। পরিবহন মালিকরাও এরই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নগরীতে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তিতে বাস চালানোর বদলে নির্ধারিত বেতনে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে। এরই মধ্যে এটি কার্যকর হয়েছে আর এতে যাত্রীর জন্য হাকডাকও কিছুটা কমে এসেছে।

তবে রাজধানীতে চলাচলে বিশৃঙ্খলার আরও নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে যেখানে যেখানে যাত্রী উঠানামা, পথচারীদের বিশৃঙ্খল চলাচলও এর পেছনে দায়ী।

সদ্য সমাপ্ত ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া হতাশা ভরা কণ্ঠে বলেন, নগরের ৯০ শতাংশ অধিবাসী ট্রাফিক আইন মানতে চায় না।

এর মধ্যে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ বিষয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ২০ আগস্ট থেকে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট পরা এবং সিগন্যালসহ সব ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করতে হবে।

মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসে চালক এবং যাত্রীর সিট বেল্ট ব্যবহার করতে হবে। ঢাকায় যেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস আছে সেসব স্থানে উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ঢাকার সব জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগনাল ব্যবস্থা চালু করে তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বুঝিয়ে দিতে হবে। একই সময়ের মধ্যে ঢাকায় রিমোট কন্ট্রোলের অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং চালু করতে হবে।

সড়ক ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে উপর বা নিচ দিয়ে চলাচল করা না যায়। মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট/আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে যানবাহন ও ফিটনেসের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হবে।

ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসির সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দপ্তর এসব সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে কার্যকর করবে বলে সভায় বলা হয়।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকা শহরের সড়কের যেসব স্থানে ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে সেসব জায়গার ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

২০ আগস্ট এরমধ্যে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডার পাসে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি লাইট, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৩০ আগস্টের মধ্যে আন্ডারপাসের বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ এসব ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যারা তাদেরকে ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে যেসব কার্যক্রম চলছিল সেগুলো নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যবহৃত রাখতে হবে।

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গাড়ির ফিটনেস দেয়ার সময় অবশ্যই পরিবহন দেখে তারপর ফিটনেস দিতে হবে। রুট পারমিট বা ফিটনেসবিহীন যানবাহন দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।

শিক্ষানবিশ লাইসেন্স দেয়ার সময় তিনি গাড়ি চালাতে যানেন কি না, সেই পরীক্ষা নিতে হবে এবং উত্তীর্ণদের দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স দিতে হবে। এসব কাজের জন্য কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনও নতুন নির্দেশনার বিষয় আমাদের কাছে আসেনি। বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। নির্দেশনা পেলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/এসএস/এমআর/ডিএম