হাটে গরুর দাম বেশি, খামারে কম

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৯:২৪ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ২২:০৩

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

কোবরানির হাটে বিক্রেতারা গরুর যে দাম চাইছেন, তার তুলনায় রাজধানী লাগোয়া বিভিন্ন খামারে দাম তুলনামূলক কম। খামারের চেয়ে দেড়গুণেরও বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে হাটে।

গাবতলীর গরুর হাটে ছোট থেকে মাঝারি আকারের গরু আন্দাজে ওজন হিসাব করে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা দর ধরে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। তবে খামারে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরু। 

হাটের বিক্রেতারা দাবি করছেন, পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লালনপালনে বেশি খরচ পড়েছে। তার ওপর গাড়ি ভাড়া করে পশু ঢাকায় নিয়ে আসার খরচ, এখানে থাকা খাওয়ায় বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ফলে খামারের গরুর চেয়ে দাম বেশি পড়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে পশু পালন এবং বিক্রির জন্য রাজধানী লাগোয়া বেশ কিছু খামার গড়ে উঠেছে। যারা হাটে যেতে চান না, তারা এসব খামার থেকেই পশু কিনছেন। আর হাটের চেয়ে দাম কম পড়ায় ক্রেতারাও খুশি।

ঈদের বাকি আর তিন দিন। চলছে হাটগুলোতে পশুর ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দাম দরের আলাপন। কেনাবেচা চলছে পুরোদমে যদিও বিক্রেতারা চানাচ্ছেন সোম আর মঙ্গলবার হবে ‘আসল কেনাবেচা’। আর আজ পর্যন্ত ক্রেতাদের একটি অংশ দরদাম যাচাই করছেন।

বিক্রেতারা যে দাম হাঁকছেন, প্রতি বছরই ক্রেতারা যে কথাটা বলেন, এবারও তাই বলছেন, ‘বিক্রেতারা দাম বেশি চাইছেন।’

গরুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি-এটা স্বীকার করছেন বিক্রেতারাও। এর কারণ হিসেবে তারা গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কথা তুলে ধরেছেন।
এই দাম বেশি হওয়ার কারণেই আরও অপেক্ষার কথা বলছেন ক্রেতারা। তবে গত বছর একই আকারের পশুর দাম যা ছিল এবার তার চেয়ে অনেক বেশি চাওয়ার পরও আশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ার কথা বলছেন বিক্রেতারা।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট গাবতলীতে গরুর ওজন কত হবে সেটি আন্দাজ করে কেজিপ্রতি পাঁচশ টাকা করে চাইছেন ক্রেতারা। তবে গরু কাটাকাটি করলে নাড়িভুড়ি আর চামড়া কাটার পর দাম হয়ে যাবে দ্বিগুণ।

তবে এই আন্দাজের দরটি আবার ছোট এবং মাঝারি আকারের গরুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিশালাকায় গরু হলে দামটা আরও চড়া হয়।

এবার পশু পালনে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন হাটে গরু নিয়ে আসা কুষ্টিয়ার রাসেদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এইবার দাম তো বেশি হইবই, খাওনের খরচ অনেক গেছে। একেকটা গরুর পিছনে ৭০ হাজার টাকা, ৮০ হাজার টাকা খরচই গেছে।’
হাটের হাসিল আদায়ের দায়িত্বে থাকা জিতু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাটে গরু উঠছে অনেক। বেচাকেনাও ভালই হচ্ছে। বড় গরুর বিক্রি কম। ছোটগরু বেশি যাচ্ছে। গতকালও (শুক্রবার) ছোট গরুর বিক্রি বেশি ছিল।‘

এই তুলনায় মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের আশেপাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন খামারে ওজন দরে পশু বিক্রি হচ্ছে। সেখানে গরু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। আবার পশুর ওজন চোখের আন্দাজে ঠিক করা হয় না, বেশ কিছু খামারে ওজন করার যন্ত্রও আছে।

বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ‘বেঙ্গল ফার্ম হাউজ’ এর খামার। এখানকার ৮৫ টি গরুর মধ্যে ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে ৫০ টি। বিক্রির অপেক্ষায় ৩৫ টি। অবিক্রিত গরু গুলোই আকারে বড়।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক রমজান আলী ড্যানি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছোট গরুর চাহিদা বেশি। আমার খামারের অধিকাংশ ছোট গরু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলোও আছে, তাও আশা করছি বিক্রি হয়ে যাবে।’

এ বছর গরুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। বলেন, ‘হিসেব দেয়া হচ্ছে যে, চাহিদার তুলনায় গরু বেশি আছে। এটা পুরোই ভুল। কারণ, আমার কাছেই বিক্রির উপযোগী আরও দেড়শ বেশি গরু আছে। কিন্তু আমি তো তা বিক্রির জন্য আনিনি এবং আমি তা এখন বিক্রিও করব না। কোনো খামার ব্যবসায়ী এখন সব গরু বিক্রি করব না। আমরা এগুলো বিক্রি করব ঈদের পরে। সুতরাং গরুর সংকট তৈরি হতেই পারে।‘

দেশের অন্যতম বৃহদাকার ও বাংলাদেশ এগ্রো এসোসিয়েশন এর সভাপতি ইমরান হোসেন পরিচালিত ‘সাদিক এগ্রো’তে এখানে ২০০ থেকে ৪০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ধরা হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা করে। ওজন ৪০১ থেকে ৫০০ কেজির মধ্যে হলে কেজি প্রতি দাম গুনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর ৪৫০ টাকা কেজি তরে বিক্রি হচ্ছে ৫০১ থেকে ৬০০ কেজির ওজনের গরুগুলো।

ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/কারই/ডব্লিউবি