বন্দি অবস্থায় কাটবে নওশাবার ঈদ

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৭:০১ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৭:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ফেসবুক লাইভে এসে দুই ছাত্রকে হত্যা এবং একজনের চোখ তুলে নেয়ার মিথ্যা প্রচারের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের ঈদ কাটবে বন্দি অবস্থায়।

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আইসিটি আইনের মামলায় সোমবার তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আকতার নওশাবার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। তার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন ইমরুল কাওসার।

গত ৪ আগস্ট রাতে র‌্যাবের হাতে আটক নওশাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আর তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোমর এবং মাথা ব্যথার জন্য তার চিকিৎসা চলছে সেখানে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট ফেসবুক লাইভে এসে নওশাবা উদ্ভ্রান্তের মতো বলতে থাকেন, এই মাত্র দুই জন ছাত্রকে হত্যা এবং একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। তিনি কথাগুলো এমনভাবে বলছিলেন যেন তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।

কিন্তু নওশাবা কথা বলছিলেন উত্তরা থেকে আর তিনি ঘটনার কথা বলছিলেন জিগাতলার।

এই অভিনেত্রী সেদিন বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ, আপনাদের জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোটভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা সবাই একসাথে হোন। প্লিজ ওদের প্রটেকশন দেন। বাচ্চাগুলো আনসেভ অবস্থায় আছে। প্লিজ আপনারা রাস্তায় নামেন। প্লিজ আপনারা রাস্তায় নামেন এবং ওদের প্রটেকশন দেন। এটা আমার রিকোয়েস্ট।’

নওশাবা আরও বলেন, ‘আমি এ দেশের একজন মানুষ, নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি যে, জিগাতলায় একটু আগে একটি স্কুলে একটি ছেলের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। একটু আগে ওদের অ্যাট্যাক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেটা করেছে। প্লিজ প্লিজ ওদের বাঁচান। তারা জিগাতলায় আছে। আপনারা এখই নামবেন। আপনাদের বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। এটা আমার রিকোয়েস্ট।’

‘যে পুলিশরা আছে, তারা অবশ্যই বাচ্চাদের প্রটেকশন দেন। আপনারা প্লিজ কিছু একটা করেন। সরকার যদি দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে জনগণ কিসের জন্য আছেন আপনারা। আমরা ৭১-এ পেরেছি, ৫২-এ পেরেছি এবারও পারব। আমাদের দরকার নাই কাউকে।’

আটক হওয়ার আগে আবার ফেসবুক লাইভে এসে নওশাবা বলেন, তিনি ব্যবহৃত হয়েছেন। একজনের কথায় বিশ্বাস করে ওই লাইভে এসেছেন তিনি।

পরে র‌্যাবকে নওশাবা জানান, রুদ্র নামে একজনের কথায় তিনি ওই ফেসবুক লাইভে আসেন। ওই তরুণের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ৩ আগস্ট শাহবাগে।

এর মধ্যে ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানোর অভিযোগের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় নওশাবাকে গত ৫ আগস্ট চার দিন এবং ১০ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ।

১৩ আগস্ট রিমান্ড শেষে এই অভিনেত্রীকে ঢাকা সিএসএম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে দুইজন নারী পুলিশ কন্সটেবলের সহায়তায় আদালতের দ্বিতীয় তলায় উঠানো হয়। কিন্তু তিনি মারাত্মকভাবে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় আদালতের এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সে সময় চিকিৎসা শেষে ফিরিয়ে আনা হলেও রাতে তাকে আবার ভর্তি করা হয়।

সেদিনের সেই গুজব নওশাবা ছাড়াও দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে বহুজনে ছড়িয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১টি মামলায় মোট ৯৭ জনকে আটক করার তথ্য গত ১৬ আগস্ট জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী।

তবে নওশাবা যার কথা শুনে লাইভে আসেন, সেই রুদ্রকে আটক করা গেছে কি না, তা এখনও জানায়নি পুলিশ। আর নওশাবার কাছ থেকে কী তথ্য উদঘাটন করা গেছে, সেটিও প্রকাশ পায়নি এখনও।

ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/ডিএম