যাত্রীর চাপে দেবে গেল রেলের কোচ

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫০ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ২২:৫৯

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস

নিষিদ্ধ। তবে ছাদে উঠায় বাধা দেয়ার উপায় নেই। আর বগি ভরেও যাত্রী টুইটম্বুর প্রতিটি ট্রেনের ছাদ। যাত্রীরা উঠছেন বটে, ট্রেন সইতে পারবে তো?

অন্তত একটি ট্রেন পারেনি, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দেবে গেছে দুটি বগি। পরে করতে হয়েছে মেরামত।

ঈদের দুই দিন আগে সোমবার উত্তরের জেলা লালমনিরহাটগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনে এই ঘটনা ঘটে। দুপুরে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে কিছুদুর এগিয়ে যেতেই থেমে যায় ট্রেনটি। কারণ, একটি কোচ দেবে যায় লাইনে। পরে যাত্রীদের নামিয়ে সেটি  মেরামত করার পর ট্রেনটি গন্তব্যের দিকে ছেড়ে যায়।

ট্রেনের গার্ড মাহফুজুর রহমান জানান, পৌঁনে তিনটায় কমলাপুর ছেড়ে ২০০ গজ এগিয়ে যাবার পরই ট্রেনটিতে গোলযোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দেবে যায় ট্রেনের সবচেয়ে পেছনে থাকা কোচটি। বাধ্য হয়ে ট্রেনটি আবার কমলাপুরে ফিরে আসে।

স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, তারা জোরে শব্দ শুনতে পান এবং সন্দেহ করেন একটি বা দুটি কোচ দেবে গেছে।

রেলওয়ে পুলিশ, ক্ষতিগ্রস্ত ওই কোচের ছাদে থাকা যাত্রীদের সরিয়ে নিলে ট্রেনটিকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করেন রেলের কর্মীরা। ৩টা ২০ মিনিটে ফের লালমনিরহাটের উদ্দেশে কমলাপুর ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

সোমবার ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি কমলাপুরে এসে পৌঁছাতেই বেজে যায় দুপুর দেড়টা। পরে ৩টা ২০ এর দিকে সেটি কমলাপুর ছেড়ে যায়।

ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করা যাচ্ছে না

ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস শেষ। জরুরি সেবাদানকারী সংস্থা ছাড়া বাকি সব অফিস আদালত বন্ধ। বিপনী বিতান আর অল্প কিছু দোকান ছাড়া বাকিগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো করে ছুটছে বাড়ির পানে।

যানজট না থাকা আর তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ায় ট্রেন বরাবরই যাত্রীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। আর এই অতিরিক্ত আগ্রহ আবার ডেকে আনছে বিপদ। ঝুঁকি উপেক্ষা করে বরাবরের মতো এবারও ট্রেনের ছাদে চাপছেন যাত্রীরা।

কারণ আর কিছুই নয়, যত যাত্রী স্টেশনে, তাদের ধারণ করার মতো বগি নেই। কিছু ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা নিষিদ্ধ থাকলেও ঈদের সময় সে নিষেধাজ্ঞা মানা সম্ভভ হয় না। আর বগিতেও যখন দাঁড়ানো যায় না, তখন যাত্রীরা চাপেন ছাদে।

কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এই ছাদের ভ্রমণ। রবিবার কমলাপুরে ট্রেন ছাড়ার আগে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের ছাদ থেকে নামিয়ে দিলেও পরে বিমান বন্দর থেকে প্রতিটি ট্রেনের ছাদ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে সোমবার কমলাপুরে ছাদের যাত্রী নামাতে তাদের কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সকাল থেকে প্রতিটি ট্রেনের ছাদ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনের আঙিনা,  প্লাটফর্ম ও আশপাশের জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্টেশনে ঢোকার প্রবেশপথেই মানুষের জট। প্লাটফর্মে আসার পর দেখা যাচ্ছে, ট্রেন নেই, অথবা ট্রেন থাকলেও তাতে উঠে বসার কোনও সুযোগ নেই। কারণ ততক্ষণে পুরো রেলগাড়ি যাত্রীতে ঠাসা।

কার টিকিট আছে কার নেই তা দেখারও কোনও সুযোগ নেই। স্টেশনে ট্রেন আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নারী, শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। যে যেভাবে পারছেন উঠে পড়ছেন। দরজার পাশাপাশি জানলা দিয়েও উঠেন যাত্রীর্।

স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ট্রেনের ছাদে ভ্রমন করা দণ্ডনীয় অপরাধ, ছাদে ভ্রমণ বিপজ্জনকও। আমরা যাত্রীদের বাধা প্রদান করছি। তবে যাত্রীরা বাধা না মেনে ছাদে উঠছেই।’

যারা ছাদে চাপছেন তারা বিপদের বিষয়টি মাথায় রাখছেন না। বলছেন, বাড়ি যাবেন, আর পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা কপালের ফের হিসেবে ধরে নেবেন তারা।

ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী উঠলেও তাতে রেলের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, যারা ছাদে চাপছেন বা বগিতেই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠছেন, তাদের টিকিট আছে কি নেই, তা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। আর যাত্রীদের একটি বড় অংশই টিকিট কেনেননি, এটাও স্পষ্ট।

ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/ডিএম/ডব্লিউবি