বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদের নাচ

গাজী ইয়াসিনুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৫৭

সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রতিষ্ঠার পেছনে আরো একজন বিজ্ঞানীর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলিই (Galileo Galilei, ১৫৬৪-১৬৪২)। গ্যালিলিও টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন।

টেলিস্কোপ আবিষ্কারের মূল কৃতিত্ব ডাচ লেন্স করিগর হ্যান্স লিপার্শেকে দেওয়া যেতে পারে। লিপার্শে উত্তল লেন্স ব্যবহার করে দূরের বস্তুকে দেখার পদ্ধতি বের করেন। গ্যালিলিও শুধু পদ্ধতি একটু পরিবর্তন করে আকাশ দেখার জন্য ব্যবহার করেন।

টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের দিকে চোখ দিলেই নতুন জগৎ। আগে যা খালি চোখে ধরা পড়েনি তা গ্যালিলিও দেখতে শুরু করলেন। চাঁদকে আমরা অতি সুন্দর হিসাবেই জানি। কিন্তু গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেন চাঁদের আসল রুপ। তিনি চাঁদের গায়ে পাহাড় ও খাদ সম্পর্কে ধারণা দেন। চন্দ্রপৃষ্ঠ মোটেও সমতল নয়। চাঁদের সৌন্দর্য শুধু কবিদের বাণিজ্যিক প্রচারণা। এই সত্য গ্যালিলিও প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি মিল্কিওয়ে ছায়াপথের দিকে টেলিস্কোপ দিয়ে বললেন এটি আসলে অসংখ্যা তারার সমষ্টি। তিনি শুক্র গ্রহের বিভিন্ন দশাসমূহ বর্ণনা করেন।

গ্যালিলিও সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষণ ছিল বৃহস্পতি গ্রহকে কেন্দ্র করে। তিনি বৃহস্পতির দিকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেন চারটি চাঁদ (উপগ্রহ)।

বৃহস্পতি আরও উপগ্রহ আছে। কিন্তু এই বড় চারটি সহজেই দেখা যায়। গ্যালিলিওর কম শক্তির টেলিস্কোপ দিয়ে চারটি উপগ্রহই স্পষ্ট বোঝা যেত।

তিনি বহুদিন পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলেন যে উপগ্রহগুলো বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। ওই চার চাঁদের নাচ গ্রহরাজ বৃহস্পতিকে ঘিরেই। এই পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পর্যবেক্ষণ থেকে গ্যালিলিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। মহাবিশ্বের সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে তার উপগ্রহগুলো ঘুরছে। সুতরাং পৃথিবী সব মহাজাগতিক গতির কেন্দ্র নয়। প্রায় দুই হাজার বছরের পুরাতন এরিস্টটলীয় ধারণা- ‘পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র’ চূড়ান্তভাবে ভুল প্রমাণিত হল। দেখলেন তো সূর্যকে কেন্দ্র করে সব গ্রহগুলো ঘুরছে তা বোঝার জন্য সৌরজগতের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখার প্রয়োজন পড়েনি। পর্যবেক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাই যথেষ্ট এবং তা পৃথিবীতে বসেই করা সম্ভব। একদিন পৃথিবীতে বসেই সমগ্র মহাবিশ্বকে দেখা যাবে। বোঝা যাবে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।

গ্যালিলিও ইতালিয়ান ভাষায় The Starrry Massage বইটির মধ্যমে তার পর্যবেক্ষণের কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেন (তখন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা সাধারণত ল্যাটিন ভাষায় লেখা হত যা সাধারণ মানুষের পড়ার উপযুক্ত নয়)।

গ্যালিলিও সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের সপক্ষে জোর প্রচারণা শুরু করেন। সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রচারের কারণেই গ্যালিলিও ক্যাথোলিক চার্চের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। ১৬৩৩ সালে প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধে বলার জন্য তাকে বিচারের সম্মুক্ষীণ করা হয় এবং বাকি জীবন গৃহবন্দি রাখা হয়।

কেপলার এবং গ্যালিলিও হলেন এমন দুইজন বিজ্ঞানী যারা বিজ্ঞানকে দর্শন থেকে মুক্তি দিয়ে ডাটা, পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণ নির্ভর করে তোলেন।

জুলাই, ২০১৬এ NASA’র স্পেস প্রব জুনো বৃহস্পতি গ্রহের নিকট পৌঁছে। এতে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি (রেডিয়েশন থেকে বাঁচানোর জন্য) গ্যালিলিও লেগো মিনিফিগার দিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে গ্যালিলিও বৃহস্পতি দেখার সুযোগ পেলেন।

কোপারনিকাস, কেপলার ও গ্যালিলিও এটা প্রতিষ্ঠা করেন যে, সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলো ঘুরছে। মহাবিশ্ব অনেক বড় তারা সূর্যের মতই উজ্জ্বল বস্তু যা অনেক দূরে অবস্থিত।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :