ধূমপানের ঠিকুজি

মো. আলতাফ হোসেন
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৮, ০৮:১৮

মানুষ কবে থেকে ধূমপান শুরু করে তার সুনির্দিষ্ট তারিখ কারো জানা নেই। তবে এটুকু ধারণা করা হয় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৪-১৮ সালে মানুষ ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি ধূমপানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তুঙ্গে ওঠে। মহিলারা ধূমপান শুরু করে ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। ক্রমে ধূমপান নেশায় পরিণত হয়। কিন্তু মানুষ জানত না ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। এই ধূমপান বা তামাকের ব্যবহারের কারণে মৃত্যুমুখী হচ্ছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ- এটা মানুষের জানা ছিল না।

তামাক গাছ বামন জাতের স্বল্পজীবী উদ্ভিদ। পরিপূর্ণ তামাক গাছের পাতাকে বিশেষভাবে শুকিয়ে সেই পাতাকে উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তামাক পাতা দিয়ে সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, জর্দা, গুল, নস্যি ও অন্যান্য উদ্দীপক দ্রব্য তৈরি করা হয়।

তামাক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এটি ক্যানসার ও হৃদরোগসহ নানা ধরনের কঠিন রোগ সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তামাকের এত ক্ষতি থাকা সত্ত্বেও বিশে^ তামাকসেবীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে তামাকজনিত কারণে মৃত্যু।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারে বছরের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয় ধূমপানজনিত রোগের চিকিৎসায়। আর ধূমপানজনিত অসুস্থতার কারণে জাতীয় উৎপাদনশীলতার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসারে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ সিগারেট, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন, যা দেশের ৪৩ শতাংশ। বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে ধূমপানজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়া ক্যানসারজনিত মৃত্যু ৩৮ শতাংশ, যক্ষ্মায় ৩৫ শতাংশ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ২৪ শতাংশ মারা যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি করে যখন বিশ^ব্যাপী তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া যায়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তামাক গ্রহণের কারণে মারা যেতে পারে। সংস্থার মতে, ৭০ ভাগ তামাকের উৎপাদনও বিক্রি হয় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এই উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরী তামাক পণ্যে বেশি আসক্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষম জনশক্তির জন্য অশনি সংকেত।

তামাক বা সিগারেটের সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হলো কার্বন মনোক্সাইড, নিকোটিন, টার। কার্বন মনোক্সাইড গাড়ির পাইপ দিয়ে নির্গত গ্যাসের মতোই এবং ফুসফুসে সে প্রবেশ করে অক্সিজেনের ক্ষমতা কমিয়েছে। চাহিদামাফিক শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ যদি অনিয়মিত থাকে তখন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো অধিক চাপ বৃদ্ধি করে। নিকোটিন মিশ্রিত কার্বন মনোক্সাইড ধূমপায়ীর শরীরে কর্বোবিব থ্রমবসিস এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। টার ফুসফুসে ক্যানসার স্পাইসিমা এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ধূমপান যে কেবল ধূমপায়ীদের জন্য ক্ষতিকর, তা নয়। একজন অধূমপায়ী যদি তামাকের ধোঁয়া নিঃশ্বাসে নিতে বাধ্য হন তবে তিনিও ধূমপায়ীর মতো সমান ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুইডেনের একটি আদালত ১৯৮৫ সালে এ মর্মে রায় প্রদান করেন যে, সহকর্মী কর্তৃক ধূমপান আর অধূমপায়ী সহকর্মীর ফুসফুসের ক্যানসার মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ এবং এটা একটা পেশাগত অপরাধ।

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে এখন বিশ্ববাসীর ভালো করেই জানা। তবুও ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশে ধূমপায়ীয় ৪২% পুরুষ ও ৬% মহিলা। তামাকদ্রব্য গ্রহণের কারণে প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করে ৩৫ লাখ লোক। তার মধ্যে ১০ লাখ উন্নয়নশীল দেশে। ধূমপানের কারণে ২৫ কোটি শিশু-কিশোর অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করে, যার তিন ভাগের এক ভাগ উন্নয়নশীল দেশে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে তামাক মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান কারণ হিসেবে পরিণত হবে। বিশ^ব্যাপী ধূমপানের ফলে মৃত্যুর হার বেড়ে তিনগুণ হবে। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত তামাকজনিত রোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫। বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে গড়ে ওঠেছে সামাজিক প্রতিরোধ। প্রতিবছর সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী পালিত হয় বিশ^ তামাক মুক্ত দিবস। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয় দিবসের স্লোগানে। সারা বছর ধরেই চলুক তামাকবিরোধী প্রচারণা। ধূমপানে মৃত্যু ঘটে- সবাই তাই তামাক থেকে দূরে থাকুন।

মো. আলতাফ হোসেন: পরিবেশবিদ ও গ্রীন ক্লাবের (মানিকগঞ্জ) চেয়ারম্যান

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/এজেড/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

কেন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :