উন্নয়নশীল দেশ তুরস্ককে যেমন দেখছি-৮

তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা

রহমত উল্লাহ
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৮, ২২:১৩

গত পর্বে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ পর্বে থাকছে তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক সুবিধা-সুবিধার কথা।

তুরস্কে সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা। তুরস্কের বেসরকারি বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এশিয়া, আফ্রিকা, বলকানসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশ কিছু দরিদ্র শিক্ষার্থীকে তুরস্কে এনে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। ওই সব শিক্ষার্থীর যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া এবং মাসিক হাত খরচের ব্যবস্থা ফাউন্ডেশনগুলোই করে থাকে।

এ ছাড়া নিজ খরচে তুরস্কে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনেককেই ফাউন্ডেশনগুলো থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। কিছু কিছু ফাউন্ডেশন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে থাকে। অনেক ফাউন্ডেশন বিদেশি শিক্ষার্থীদের মাসিক হারে আর্থিক সুবিধাও দিয়ে থাকে।

ছাত্রদের মেস বা বাসায় খাদ্য উপকরণ দিয়ে সহায়তাকারী সংগঠনও রয়েছে অনেক। প্রয়োজন হলে বিবাহিত শিক্ষার্থীদের বাসার মালপত্রের ব্যবস্থা করে দেয়; বিপদে পড়লে রয়েছে আর্থিক সহায়তাও।

উদেফ: বিদেশি শিক্ষার্থীরা তুরস্কের মেহমান

তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে তুর্কিদের উদ্যোগে বিভিন্ন শহরে ‘বিদেশি শিক্ষার্থী সংস্থা’ গড়ে উঠেছে। ২০০৪ সালে ইস্তাম্বুলে ‘সাদের’ নামে প্রথম একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। সময়ের আবর্তনে তুরস্কের ৪৯টি শহরে তুর্কিদের উদ্যোগে ৫৭টি সংস্থা গড়ে উঠেছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক, সামাজিক, একাডেমিক, মনস্তাত্ত্বিকসহ সব সমস্যায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে এ সংগঠনগুলোর জুড়ি নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীকে বিদেশি হিসেবে নয়, ‘তুরস্কের অতিথি’ ‘আত্মীয়’ হিসেবে দেখে এ সংস্থাগুলো।

একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা এসব সংগঠনকে একটি ধারায় আনতে ২০১২ সালে ‘উদেফ’ নামে Federation of International Student Associations (UDEF, http://www.udef.org.tr/) একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গড়ে ওঠে। এ সংস্থার উদ্যোগে তুরস্কের ৮১টি শহরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে ‘বিদেশি শিক্ষার্থী সংস্থা’ গড়ে তোলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার গৃহীত নীতির আলোকে প্রায় প্রতিটি শহরেই শতাধিক শিক্ষার্থীকে বছরের ৯ মাস ২০০ লিরা করে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। এ ছাড়া আবাসন, খাদ্য, গৃহসামগ্রী, তুর্কি ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা কোর্স ও ভর্তি কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে এ সংস্থাগুলো।

পরিবার থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পারিবারিক শূন্যতা পূরণ করতে এ সংস্থাগুলো নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। পিকনিক, ভ্রমণ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিষয়ভিত্তিক কর্মশালা, দেশীয় খাবারের আয়োজন, পরিচিতি অনুষ্ঠান, তুর্কি পরিবারে বেড়ানো, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাসায় বেড়ানো, ফুটবল-ভলিবল টুর্নামেন্ট, যুব ক্যাম্প, সাঁতার, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপের বার্ষিক অনুষ্ঠানে সহায়তা প্রদান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক প্রদর্শনী, বই পাঠ প্রতিযোগিতা; রচনা, শর্টফিল্ম, ছবি তোলা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করা হয়। এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না।

রয়েছে অন্যান্য ফাউন্ডেশনও: তুরস্কে আপনি একা নন

উদেফের উদ্যোগে প্রভাবিত হয়ে তুরস্কের অন্যান্য ফাউন্ডেশনও বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক সমর্থন দেওয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে আর্থিক সহায়তা, খাদ্য ও আবাসনসহ বেশ কিছু সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন শহরের ফাউন্ডেশনগুলো। অনেক ফাউন্ডেশনই এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহায়তাকে নিজেদের কার্যক্রমের অন্যতম একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করছে।

পড়াশোনা ও চাকরি করে টাকা আয় কঠিন

তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকালীন কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। দু-তিনটা বড় শহর বাদে অন্য শহরগুলোতে খণ্ডকালীন কাজ পাওয়া মোটেও সহজ নয়। আর খণ্ডকালীন কাজ যারা পান তাদের আয়ের পরিমাণ খুবই কম। ইউরোপের দেশগুলোতে যেখানে ঘণ্টায় ১০ ইউরো (সামান্য হেরফের হতে পারে) করে পাওয়া যায়; সেখানে তুরস্কে পাওয়া যায় মাত্র ২ ইউরো সমমূল্যের বেতন। ফলে খণ্ডকালীন কাজ করে তুরস্কে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা অনেকটা কঠিন।

পূর্ণকালীন কাজ যারা করতে আগ্রহী, তাদের মাসিক আয়ও তেমন না। তুরস্কের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ১৬০০ লিরা। ছাত্রদের মধ্যে যারা কাজের সুযোগ নেন তাদের গড়ে ১৬০০-১৭০০ লিরা দেয়া হয়। নিজের থাকা-খাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় খরচের পর ১০-১২ হাজার টাকার বেশি দেশে পাঠানোর সুযোগ থাকে না। সব মিলিয়ে তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বেশি থাকলেও নিজের আয় পড়াশোনা কঠিনই বলা যায়।

[আগামী পর্বে থাকছে তুরস্কের স্বাস্থ্য খাত]

লেখক: সাংবাদিক ও পিএইচডি শিক্ষার্থী, কারাদেনিজ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাবজোন, তুরস্ক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :