গরু খামারিদের মাথায় হাত

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:১৯

কাঞ্চন কুমার, ঢাকাটাইমস

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার ৫০ হাজার খামারি প্রায় এক লাখ গরু প্রস্তুত করেছিলেন। ছোট বড় মিলিয়ে এসব খামারি সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করেছিলেন এসব পশু। প্রত্যাশা ছিল এবার ভালো মুনাফা পাবেন। সেই লক্ষে ঈদের আগ মুহূর্তে বাজারে তুলেছিলেন তাদের কষ্টের পশু। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। অধিকাংশ খামারি পশু ফেরত আনলেও যারা বিক্রি করেছেন মোটা অংকের লোকসানে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝালুপাড়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম একটি বেসরকারি এনজিও ও ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন তিনটি গরু। খাবার খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে কোরবানির উপযোগী করে তুলতে তার খরচ পড়েছিল নয় লাখ টাকা। কোরবানির ঈদের তিন দিন আগে একটি পিকআপ ভাড়া করে গাবতলীর পশুর হাটে নিয়েছিলেন গরু। তিনটি গরুর সর্বসাকুল্যে দাম ওঠে পাঁচ লাখ টাকা। এই দরে গরু বিক্রি করলে তার লোকসান হবে চার লাখ টাকা।

ঈদের দিন পর্যন্ত হাটে থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি তিনি। বাড়িতে এসে পৌঁছান ঈদের দিন সন্ধ্যায়। একান্নবর্তী পরিবারের অভিভাবক তিনি। তার অনুপস্থিতিতে ঈদের আনন্দই ফিকে হয়ে যায় পরিবারের।

তার প্রত্যাশা ছিল গরু তিনটির দাম অন্তত ১২ লাখ টাকা হবে। বিক্রির অর্থ দিয়ে বউ ছেলে মেয়েদের পোশাক আশাক কিনে ফিরবেন বাড়িতে। কিন্তু তা আর হলো কই! কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই গরু বিক্রি না হওয়া হতাশার কথা বলেন তিনি। গরু বিক্রি না হওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে বড্ড দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই খামারি।

একই উপজেলার চেঁচুয়া গ্রামের আব্দুল আলিম। কোরবানি উপলক্ষে প্রথমবারের মতো খামার করেন। ১৪ লাখ টাকা দিয়ে ১২টি গরু কিনেছিলেন সঞ্চয়কৃত টাকায়। পুরো এক বছর পরিচর্যা করে গাবতলী হাটে রওনা হন ১৬ আগস্ট। প্রত্যাশা ছিল ১২টি গরু অন্তত ২০ লাখ টাকা দাম হবে। কিন্তু নয় লাখ টাকার ওপরে দাম ওঠে না। ভালো দামের আশায় ঈদের পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাকে। কিন্তু গরু বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়েই ফিরতে হয় তাকে। আরিফুলের মতো আলিমের পরিবারেরও ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। শুধু আরিফুল কিংবা আলিমই নয়। তাদের মতো প্রায় ২০ হাজার খামারি এভাবেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন।

হঠাৎ গরুর বাজার পড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খামারিরা জানিয়েছেন প্রথমদিকে গরুর বাজার চড়া ছিল। ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা ঝুঁকেছেন হাটে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ক্রেতারা দাম বেশি হওয়ার কারণে আগ্রহ হারিয়েছেন। তাছাড়া যাদের একটি গরু একাই কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য ছিল তারা যৌথভাবে কোরবানি দিয়েছেন। এসব কারণে গরু বেচাকেনা কম হয়েছে।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আলমগীর হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, এবার গরুর খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগামীতে তারা আগ্রহ হারাবেন। এতে খামারি সংখ্যা কমে যেতে পারে আশংকাজনক হারে। এর ফলে আগামীতে কোরবানির পশুর দামও ভালো পাওয়া যাবে।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এবার খামারিরা কিছুটা লোকসানের সম্মুখীন হলেও তাতে খামারিদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না।

(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)