এরা ‘সাংবাদিক’!

বোরহান উদ্দিন
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১৯:০৬

কাল অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল জাতীয় জাদুঘরে জাতীয় শোক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে। চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় সাড়ে ৫টায়। হলরুমে তিল ধরণের ঠাঁই নেই। কোনোমতে আয়োজকদের সহযোগিতায় বসার সুযোগ পেলাম আমরা পেশাগত কাজে সেখানে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিক। বিকাল চারটা থেকে বসে থাকলাম। সন্ধ্যা সাতটা পর‌্যন্ত অনুষ্ঠান কাভার করে ঘটনাস্থলে বসে নিউজ পাঠালাম অফিসে ছবিসহ। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।

কিন্তু অপ্রিয় অভিজ্ঞতা শুরু হলো হলরুম থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক নামধারী কিছু মানুষের আনাগোনা দেখে। তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিউজ প্রকাশের কথা বলে অতিথিদের কাছে টাকা চাইছেন! প্রত্যাখ্যাত হয়ে বারবার তাদের কাছে টাকা চাইছেন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে। আর যাদের কাছে চাইছেন তারাও লজ্জায় পড়ে কিছু টাকা গুঁজে দিচ্ছেন তাদের হাতে। অথচ এরা যে পেশাদার কোনো সাংবাদিক না, এরা কোনো পত্রিকা, অনলাইন, টেলিভিশনে কোথাও কাজ করে না, সেটা শিক্ষিত মানুষগুলো বোঝার চেষ্টা করলেন না।

অনুষ্ঠান শেষে যখন অতিথিরা একে একে বের হচ্ছিলেন তখন এরা টার্গেট করে তাদের কাছে দৌড়ে যাচ্ছেন একজন গলায় ক্যামেরা অন্যজন ডায়েরি হাতে। গিয়ে ‘বস বস’ সম্বোধন করে ‘বক্তৃতা চমৎকার হয়েছে’, ‘ছবি সুন্দরভাবে তোলা হয়েছে’ বলে কিছু খরচাপাতি দাবি করছেন। চোখের সামনে দেখলাম কয়েকজনের কাছে এমন করে চাওয়ার পর একজন কিছু টাকা দিলেন। পরে দুজন অন্য টার্গেটের কাছে ছুটছেন। পুরো সময়টা তারা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। একজন অতিথি আবার তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ায় তারা ফিরে আসতে আসতে তাকে ‘বাটপাড়’ বলতেও ছাড়েনি।

নিউজ পাঠানো শেষ হওয়ায় আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম এদের কাণ্ডকারখানা। একবার প্রতিবাদ করতে গিয়েও করিনি, কারণ আমি একা। আর এদের সিন্ডিকেট আছে, যারা পেশাদার সংবাদকর্মীকে মুহূর্তে অপেশাদার বানিয়ে দিতে সক্ষম। আমার অক্ষমতার জন্য দুঃখিত।

সাংবাদিক নামধারী মানুষগুলোর এই ‘বাণিজ্য’ চলে ১৫ মিনিটের মতো! সবশেষ একজন কিছু টাকা দেয়ার পর তা দেখে পাশে দাঁড়ানো নতুন একজন ভাগ বসাতে যান। তবে এরা তাকে নিরাশ করেনি। টিম লিডার টাকাটা হাতে পেয়ে জাদুঘরের মূল ফটক দিয়ে বের হলো। আমিও পেছন পেছন বের হলাম তাদের টাকা ভাগবাটোয়ারা দেখতে। বন্টনের শুরুতে তারা সমস্যায় পড়ে ভাঙতি টাকা না থাকায়। তিনজন সমান ভাগে নিতে হলে ৫০০ টাকা ভাঙাতে হবে।

পরে টাকা ভাঙাতে একজন দৌড়ে গেল বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ বইমেলার গাড়ির কাছে। কিন্তু সফল না হয়ে ফিরে আসে। অগত্যা টিম লিডার নিজের পকেট থেকে অন্য দুজনকে কিছু কম দিয়ে নোটটা নিয়ে হাসিমুখে হাঁটা শুরু করেন নিজ গন্তব্যে। অন্যরাও যার যার পথে।

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম কীভাবে সম্মানজনক এক পেশার গায়ে কলঙ্ক মেখে দিয়ে চলে গেল ওই তিনজন মানুষ।

এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত, প্রকাশ্যে ঘটছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এদের তৎপরতা দেখা যায় কোনো ঘটনার পক্ষ-বিপক্ষ দলের কাছে। আপনার-আমার সামনে ঘটছে কখনো কখনো। কেউ কেউ এই মানুষগুলোর খপ্পরেও পড়েছেন হয়তো। কিন্তু এমনটা চলতে দেয়া কি উচিত? আসুন, এদের প্রতিহত করি। পেশার মর্যাদা রক্ষা করি।

গণমাধ্যমের বাইরে যারা, তাদের প্রতি অনুরোধ- নিউজ প্রকাশের কথা বলে, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কেউ টাকা দাবি করলে বুঝে নেবেন এরা প্রকৃত সাংবাদিক নয়। পেশাদারও নয়। টাকা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে আপনিও এদের প্রতিহত করুন।

লেখক: সংবাদকর্মী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :